কোচি বন্দরে জ্বালানি নামানোর তদারকিতে গৌতম গুপ্ত (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
কোচি বিমানবন্দর এখনও চালু হয়নি। নৌবাহিনীর বিমানঘাঁটিতে বায়ুসেনার ছোট বিমান সবে নামতে শুরু করেছে। তিরুঅনন্তপুমের পর আর সে ভাবে ট্রেনও চলছে না। ফলে বিমান বা রেল পথে বন্যা-বিপর্যস্ত কেরলের জন্য আসছে না কোনও ত্রাণ সামগ্রী। ভরসা শুধু কোচি বন্দর। বন্যা বিধ্বস্তদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন সেখানকার কর্মী-অফিসাররা। আর বন্দরের ট্রাফিক ম্যানেজার হিসেবে তার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এক বঙ্গসন্তান, গৌতম গুপ্ত।
বন্দরের একমাত্র বাঙালি অফিসার গৌতমবাবু সোমবার কোচি থেকে বলেন, ‘‘কোচি বন্দরের প্রতিটি কর্মী কেরলের দুর্গমতম প্রান্তে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজে নেমে পড়েছেন। তাতে নেতৃত্ব দিতে পেরে ভাল লাগছে। বন্দরের প্রতিটি কর্মী যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা অবিশ্বাস্য।’’
বন্দর সূত্রের খবর, গত রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ মুম্বই থেকে নৌবাহিনীর জাহাজ আইএনএস দীপক ৮০০ টন পানীয় জল ও ১৮ টন শুকনো খাবার নিয়ে কোচি বন্দরে পৌঁছয়। পানীয় জল সে দিনই দু’টি বার্জে করে আরও প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ট্রাকে খাবার যায় ত্রাণ শিবিরে। আরও একটি কনটেনার ভেসেল এসএসএল কৃষ্ণা কোচি বন্দর থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছায় তুতিকোরিনে। সোমবার সকালে আরও বাক্স-বন্দি পণ্য পাঠানো হয় ভাল্লারপদমে। সেখান থেকে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে। জল-খাবারের পাশাপাশি কেরলে পেট্রল-ডিজেলের সঙ্কটও শুরু হয়েছে। সেই সমস্যা মেটাতে ভারত পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এমটি স্বর্ণ গোদাবরী নামে ৫০ হাজার টন তেলবাহী একটি জাহাজ এ দিনই কোচিতে নিয়ে এসেছে। জাহাজটি অন্যত্র যাচ্ছিল। সেই যাত্রা বাতিল করে আপাতত কেরলের জ্বালানি সঙ্কট মেটাবে স্বর্ণ গোদাবরী। আজ, মঙ্গলবারও মুম্বই থেকে নৌবাহিনীর আর একটি জাহাজ জল-খাবার নিয়ে কোচি পৌঁছবে। আসছে অনেক ছোট ভেসেল-বার্জও।
বন্দর সূত্রের খবর, আপাতত শুধু ত্রাণ সামগ্রীর জাহাজ বা ভেসেল অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আনা হচ্ছে। কী পণ্য নামছে, কোথায় তা যাবে, কোথায় কোন সামগ্রী আগে পৌঁছনো দরকার, এ সবেরই তদারকি করছেন গৌতমবাবু। বন্দরের মধ্যে ব্রিসটো স্কুলে ত্রাণ শিবিরও খোলা হয়েছে। সেখানে ৬০ জন রয়েছেন। প্রতিদিন সেই সংখ্যা বাড়ছে। বন্দরের কর্মীরা এক দিনের বেতনের পাশাপাশি ৬২ লাখ টাকা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন।
এখন পরিস্থিতি কেমন? গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, এর্নাকুলাম থেকে সোরানুর পর্যন্ত সোমবার একটি ট্রেন পরীক্ষামূলক ভাবে চলেছে। পালঘাট পর্যন্ত তা চালাতে হবে। তবেই বন্দরে নামা ত্রাণ সর্বত্র পৌঁছনো যাবে। নৌবাহিনীর বিমানবন্দর থেকে যাত্রিবাহী বিমান আরও ছাড়বে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে যত দিন তা স্বাভাবিক না হচ্ছে, বন্দরের মাধ্যমেই চলবে ত্রাণ বিলির কাজ।