জলখাবারের জোগান করতে এক সময় জঙ্গল থেকে কচু এবং ঢেকি শাক তুলে আনতে হত। বাজারে বিক্রি করে হাতেগোনা যা পয়সা পেতেন সেটা দিয়েই মিলেমিশে ভাগ করে জলখাবার খেতেন। তিনিই এ বার মোদীর মন্ত্রিসভায়।
তিনি রামেশ্বর তেলি। ডিব্রুগড়ের বাসিন্দা রামেশ্বর মোদীর নয়া মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছেন এ বার। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে অসমের এই সাংসদকেই বেছে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
রামেশ্বর তেলির ছোটবেলা খুব অভাবের মধ্যে কেটেছে। বাবা সামান্য চা শ্রমিক ছিলেন। ডিব্রুগড়ের চা বাগানেই দরমার ঘরে ভাই, দুই বোন নিয়ে মোট ৬ জনের বাস। বাবার টাকায় ঠিকমতো জলখাবারও জুটত না তাঁদের।
রামেশ্বরের বয়স তখন মাত্র ১২ বছর। তখন থেকেই নিজেদের খাবার খরচ নিজেই উপার্জন করতে শুরু করেন। দু’বছরের ছোট ভাই গুণেশ্বরকে সঙ্গে নিয়ে রোজ আশেপাশের জঙ্গল চষে বেড়াতেন। সঙ্গে করে কচু আর ঢেকি শাক নিয়ে ফিরতেন। সেগুলোই বিক্রি করে রুটি কেনার পয়সা জোগাড় করতেন।
বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। মা, ভাই এবং দুই বোনের সংসারের হাল ধরতে হয় রামেশ্বর তেলিকে। তাই পড়াশোনা বিশেষ করে উঠতে পারেননি।
রোজগারের জন্য বাড়ির কাছেই একটি পানের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে যা উপার্জন হতো তাতে সংসার চলত। একটু একটু করে সেই টাকা জমিয়ে দুই বোনের বিয়েও দেন।
কলেজে পড়ার সময় রামেশ্বর অসমের চা জনগোষ্ঠী ছাত্র সংস্থা (আটসা)য় যোগ দেন। আটসা নেতা তেলির জনপ্রিয়তা ও নেতাসুলভ গুণ নজরে পড়ে বিজেপি নেতাদের। ২০০১ সালে দুলিয়াজান থেকে বিজেপি বিধায়ক হন রামেশ্বর। ২০০৬ সালেও বিধায়ক হন। তবে ২০১১ সালে হেরে যান। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিন হন। কংগ্রেসের পাঁচ বারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পবনসিংহ ঘাটোয়ারকে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ভোটে হারিয়ে তাক লাগান তিনি।
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে পবনসিংহই তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন। ২০১৪ থেকে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে তাঁকে ৩,৬৪,৫৬৬ ভোটে হারিয়েছেন রামেশ্বর। যা অসমের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধান। বিপুল জনভোট, রামেশ্বরের জনপ্রিয়তার জন্যই তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করেন মোদী।
কচু, ঢেকি শাক বা পানের দোকান— এগুলোর আর কোনওটাই তাঁকে চালাতে হয় না। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংসাসারের অভাবও আর তেমনটা নেই। তবে রামেশ্বরের জীবনযাপন কিন্তু তেমনটাই রয়েছে। তাঁর মা, ভাই এখনও চা বাগানের সেই দরমার ঘরেই থাকেন। রাজনীতির কাজে বাড়িতে খুব বেশি থাকতে পারেন না রামেশ্বর। বাড়ি ফিরলে কিন্তু এই দরমার ঘরই তাঁর আস্তানা।
রামেশ্বরের এক কাকা এখনও ঠেলা চালান। অন্য এক কাকা গ্রাহকদের বাড়ি বাড়ি এলপিজি সিলিন্ডার পৌঁছে দেন। আর এক কাকা অটোচালক।
তবে প্রথমে সংসার এবং পরে রাজনীতির ঘানি টানতে গিয়ে নিজের কথা এখনও ভেবে উঠতে পারেননি রামেশ্বর। তাই ৪৯ বছর বয়স হলেও নিজের সংসার গোছানো হয়ে ওঠেনি রামেশ্বরের।
বৃহস্পতিবারে ছেলেকে শপথ নিতে দেখে গর্বে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন রামেশ্বরের মা। এখন শুধু একটাই ইচ্ছা, রামেশ্বরের বিয়ে। পাত্রী খোঁজাও নাকি শুরু করে দিয়েছেন তিনি।