তর্কাতর্কি: মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ মামলার রায় ঘিরে বিক্ষোভ। সোমবার হায়দরাবাদে। (ইনসেটে স্বামী অসীমানন্দ)। ছবি: পিটিআই
প্রমাণের অভাব। এই যুক্তি দেখিয়ে ১১ বছর আগে হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণ মামলা থেকে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ‘অভিনব ভারত’-এর নেতা নবকুমার সরকার ওরফে স্বামী অসীমানন্দ ও তাঁর ৪ সঙ্গীকে বেকসুর খালাসের রায় দিল বিশেষ এনআইএ আদালত। এই রায়ের পরই বিজেপি নেতৃত্ব যখন গেরুয়া সন্ত্রাস নিয়ে মন্তব্যের জন্য কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর মুণ্ডপাত শুরু করেছেন, পুরো বিষয়টি সাবেক কংগ্রেস সরকারের ‘সাজানো’ বলে শোরগোল করছেন, ঠিক তখনই ইস্তফা দিলেন এনআইএ আদালতের সেই বিচারক কে রবিন্দর রেড্ডি।
২০০৭-এর ১৮ মে হায়দরাবাদের চারমিনার সংলগ্ন মক্কা মসজিদে জুম্মার নমাজ পড়ার সময়ে বিস্ফোরণে ৯ জন মারা যান। পুলিশ গিয়ে না-ফাটা আরও দু’টি বিস্ফোরক উদ্ধার করে। এ ঘটনার পরে মসজিদের বাইরে মারমুখী বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশ গুলি চালালে আরও ৫ জন মারা যান। বিশেষ এনআইএ আদালতে গত সপ্তাহে এই মামলার শুনানি শেষ হয়। সোমবার রায়ে বিচারক রেড্ডি জানান, চার্জশিটে নাম থাকা ৮ অভিযুক্তের মধ্যে ৫ জনকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) এঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে না-পারায় সবাইকে মুক্তি দেওয়া হল। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই বিচারক রেড্ডি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে ছুটিতে চলে যান। ৪ পাতার পদত্যাগ পত্রে কী রয়েছে, বিস্তারিত জানা না-গেলেও আদালত সূত্রের খবর, বিচারক রেড্ডি ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু এই ইস্তফা অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই সমঝোতা বিস্ফোরণ, মালেগাঁও বিস্ফোরণ, অজমের দরগা ও মক্কা মসজিদের বিস্ফোরণের মতো মামলাগুলিতে অভিযুক্ত হিন্দুত্ববাদী নেতাকর্মীরা মুক্তি পেয়ে যাচ্ছেন। কংগ্রেস নেতা গোলাম নবি আজাদ আজও বলেছেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থাগুলির ওপর মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন। ৪ বছর আগে এই সরকার আসার পর থেকেই এটা হচ্ছে।’’
মসজিদে পুলিশকর্তারা। ছবি: পিটিআই
আবার এই রায়ের পরে বিজেপির দাবি, গেরুয়া সন্ত্রাস কংগ্রেসের সাজানো। আদালতের রায়গুলিতে তা প্রমাণ হচ্ছে। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘গেরুয়া সন্ত্রাস নিয়ে রাহুল-সনিয়া যা বলে এসেছেন, তার জন্য ক্ষমা চান।’’ কংগ্রেসের মুখপাত্র পি এল পুনিয়া পাল্টা বলেন, ‘‘সন্ত্রাসের কোনও রং হয় না। অভিযুক্তরা তো ছাড়া পেয়ে গেল। তা হলে বিস্ফোরণটা ঘটাল কারা?’’
বিস্ফোরণ মামলা
• ২০০৭ এর ১৮ মে বিস্ফোরণ
• নমাজ চলাকালীন বিস্ফোরণে নিহত ৯, আহত ৫৮
• হরকতুল জিহাদ-এর কাজ, দাবি করে রাজ্য পুলিশ
• গ্রেফতার ১০০, অভিযোগ ওঠে পুলিশি নির্যাতনের
• সিবিআই তদন্তে বেরোয় গেরুয়া সন্ত্রাসবাদীদের হাত
• অসীমানন্দ-সহ ৮ জনের নামে চার্জশিট এনআইএ-র
• আদালতে দোষ স্বীকার করেও পরে পিছোন অসীমানন্দ
• ২০১৭-এ শর্তাধীন জামিন অসীমানন্দের
• ২০১৮, ১৬ এপ্রিল বেকসুর খালাস সব অভিযুক্ত
হরিদ্বারের পরমানন্দ আশ্রম থেকে গ্রেফতার হওয়ার পরে অসীমানন্দ দিল্লির এক আদালতে দোষ স্বীকার করেন। পরে অবশ্য বলেন, জোর করে তাঁর কাছ থেকে জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। এনআইএ চার্জশিটে জানিয়েছে, ‘নানা মন্দিরে হামলার জবাব হিসেবে এই বিস্ফোরণগুলি করার পরিকল্পনা করেন অভিযুক্তরা।’