বৈঠকে: বৃহস্পতিবার আসিয়ান সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী। ছবি: এএফপি।
নয়াদিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে সাবেকি রেওয়াজ ভেঙে আসিয়ানভুক্ত ১০টি রাষ্ট্রের নেতা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে চলেছেন। তার আগে, আজ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতার ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
আজ ভারত-আসিয়ান সম্মেলনের বক্তৃতায় কোথাও চিনের নাম করেননি তিনি। করার কথাও নয়। কিন্তু তাঁর বক্তৃতায় বুঝিয়ে দিয়েছেন যে আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে লড়াইয়ের সূচিমুখ কোন দিকে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আজ এই সম্মেলনে সমুদ্র নিরাপত্তার বিষয়টিই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। কথা হয়েছে এই সংক্রান্ত ভারত-আসিয়ান প্রস্তাবিত চুক্তিটিকে যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করা নিয়ে। মোদীর কথায়, ‘‘ভারত এবং আসিয়ানভুক্ত বিভিন্ন রাষ্ট্র— উভয় পক্ষই আইন মেনে চলে। উভয়েই শান্তিপ্রিয় সমাজে বিশ্বাসী। আসিয়ানের সঙ্গে সমুদ্রক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও বাড়াতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ এখানেই না থেমে মোদীর বক্তব্য, ‘‘সমুদ্র সহযোগিতার প্রশ্নে বাস্তবমুখী পথে আমরা চলতে চাই। সমুদ্র-নিরাপত্তা, নৌ চলাচলের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা, এই সব কিছুই আমাদের সঙ্গে আসিয়ানের সহযোগিতার অঙ্গ।’’
ফলে মুখে না-বললেও স্পষ্ট, গত কয়েক বছরে দক্ষিণ চিন সাগরের আধিপত্য নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া আসিয়ানের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে, নতুন শক্তিশালী সমীকরণ তৈরিতে মরিয়া প্রধানমন্ত্রী। ‘অ্যাক্ট-ইস্ট’ নীতি নিয়ে গত তিন বছর ধরে পথ চলছিল মোদী সরকার। কিন্তু এবার কৌশলগত ক্ষেত্রেও সেই ‘পূর্ব’-কে আরও বড় ভাবে পাশে চাওয়া হচ্ছে। ডোকলাম পরবর্তী অধ্যায়ের মূল্যায়নে এ কথাই উঠে এসেছে যে সীমান্তে মুখোমুখি সংঘর্ষের রাস্তায় যাওয়াটা শেষপর্যন্ত অর্থহীন। তাতে এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড় বিপদ তৈরি হতে পারে। যা ভারতের জাতীয় স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকরও। তাই বাণিজ্য-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক মধুর রাখার পাশাপাশি স্থির করা হয়েছে, এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে একটি চিন-বিরোধী আঞ্চলিক অক্ষ জোরদার করতে হবে। কৌশলগত ভাবে চিনকে চাপে রাখতে পারলে অন্য ক্ষেত্রে দরকষাকষির ক্ষেত্রে সুবিধে হবে, এমনটাই মনে করছে সাউথ ব্লক। উল্টো দিক থেকে এটা এতদিন চিন-ই করে এসেছে, এমনটাই দাবি বিদেশ মন্ত্রকের।
কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে পঁচিশ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক যাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য এটাই। শীর্ষ সম্মলনের পাশাপাশি আসিয়ানের ৯টি সদস্য দেশের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন মোদী। কথা হয়েছে বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক যোগাযোগ আরও বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে। আগামী বছরকে ‘আসিয়ান-ভারত পর্যটন বছর’ হিসেবে ঘোষণা করে মোদী বলেন, ‘‘গত পঁচিশ বছরে এই দু’তরফের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গত পঁচিশ বছরে আমাদের মধ্যে বাণিজ্য বেড়েছে ২৫ গুণ। দু’পক্ষের বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদের মধ্যে আদানপ্রদান আরও বাড়িয়ে এই আর্থিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ করা হবে।’’