স্বামীর ছবি নিয়ে ধর্নায় বসেছেন রাকেশ্বর সিংহ মনহাসের স্ত্রী। বুধবার জম্মুতে। ছবি: পিটিআই।
বন্দি সিআরপিএফ জওয়ান রাকেশ্বর সিংহ মনহাসের মুক্তির প্রশ্নে আলোচনার ডাক দেওয়ার পাশাপাশি ওই জওয়ান যে সুস্থ রয়েছেন তা প্রমাণ করতে ছবি প্রকাশ করল মাওবাদীরা। মাওবাদীদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা কবে, কোথায় ও কী ভাবে তা ঠিক করার দায়িত্ব ছত্তীসগঢ় সরকারের হাতে ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্র। সূত্রের মতে, এক জওয়ানের জীবন জড়িত থাকায় আলোচনায় মধ্যস্থতকারী কে হবেন, তা ঠিক করার অধিকার আবার মাওবাদীদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভূপেশ বাঘেল সরকার।
মাওবাদীরা গত সোমবারই দাবি করেছিল, তাদের হাতে সিআরপিএফের এক জওয়ান রাকেশ্বর বন্দি রয়েছেন। তবে ওই জওয়ান যে সত্যিই মাওবাদীদের কব্জায় রয়েছেন তা গোড়ায় মানতে চাননি সিআরপিএফ কর্তারা। আজ সকালেও সিআরপিএফের ডিজি কুলদীপ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না, ওই ব্যক্তি মাওবাদীদের কব্জায় রয়েছেন কি না। আমাদের কাছে আলাদা তথ্য নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ সংক্রান্ত যা চলছে, তার ভিত্তিতেই আমরা জানতে পারছি। ওই তথ্য যদি ভুলও হয়, তা হলেও আমাদের তা ধরেই এগোতে হচ্ছে।’’ বাহিনীর অনেকেরই মনে গোড়ায় সংশয় ছিল যে ওই জওয়ানের কথা বলে আসলে সময় নষ্টের চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। প্রশাসনকে ভুল পথে চালানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বাহিনীর কর্তারা। কিন্তু আজ দুপুরের পরে ধৃত রাকেশ্বরের একটি ছবি সামনে এসেছে মাওবাদীরা। যেখানে একটি ঝুপড়ির নিচে, হলুদ প্লাস্টিকের উপরে জলপাই রঙের উর্দি পরে ওই জওয়ানকে বসে থাকতে দেখা যায়। ওই ছবিটি রাকেশ্বরের সাম্প্রতিক ছবি কি না তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
আজ রাকেশ্বরের ওই ছবি প্রকাশ করে আলোচনায় বসার প্রশ্নে কেন্দ্র ও ছত্তীসগঢ় সরকারের উপরে মাওবাদীরা এক প্রস্ত চাপ বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে। ২২ জন জওয়ানের মৃত্যুর বদলা নিতে কেন্দ্রের তরফে দ্রুত হামলার আশ্বাস দেওয়া হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান হলে রাকেশ্বরের মুক্তির বিষয়টি বিশ বাঁও জলে চলে যাবে। ফলে এই মুহূর্ত কিছুটা মেপে পা ফেলার পক্ষপাতী সিআরপিএফও। কুলদীপ সিংহ বলেন, ‘‘আলোচনা চেয়ে মাওবাদীরা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের জন্য দাবি করেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য ও কেন্দ্র যা বলবে সেই ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ধৃত জওয়ানকে ছাড়াতে আচমকা অভিযান হবে কি না তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কুলদীপ। তিনি বলেন, ‘‘জওয়ানের সম্পর্কে কোনও গোপন তথ্য এলে কিছু করার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু কোনও তথ্য আসেনি।’’
এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি না নিযে আলোচনার রাস্তাতেই যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে চাইছে কেন্দ্র। মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি স্থির করার দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনের হাতেই ছেড়ে দিয়েছে কেন্দ্র। অন্য দিকে রাজ্যও চাইছে, আলোচনার প্রশ্নে উভয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারী কে হবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক মাওবাদীরাই। সূত্রের দাবি, সরকারের পছন্দের কাউকে মধ্যস্থতাকারী করা হলে তাঁকে মাওবাদীদের অপছন্দের নানাবিধ কারণ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। পরিবর্তে বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে এমন কোনও বিশিষ্টজন, শিল্পী বা সাংবাদিককে মাওবাদীরা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে বেছে নিলে রাজ্য প্রশাসনের যে কোনও আপত্তি থাকবে না, তা মাওবাদীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।