হাসপাতালে আনা হয়েছে এক জওয়ানকে। ছবি: এএনআই-এর টুইটার হ্যান্ডল থেকে নেওয়া
সামনের মাসেই ভোট। তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করা হয়েছে রাজ্য জুড়ে। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলা ঠেকানো যাচ্ছে না তাতেও। গত শনিবারই বিজাপুরে সিআরপি-র চার জওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। ঠিক তিন দিনের মাথায় ছত্তীসগঢ়ে ফের হামলা চালাল মাওবাদীরা। এ বার দন্তেওয়াড়ায়। আজ সকালে দন্তেওয়াড়া জেলার অরনপুর এলাকার নিলাওয়া গ্রামে মাওবাদী হামলায় মৃত্যু হয়েছে দূরদর্শনের এক ক্যামেরাম্যান ও দুই পুলিশকর্মীর।
আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন দু’জন পুলিশ। নিহতরা হলেন অচ্যুতানন্দ সাউ, রুদ্র প্রসাদ এবং মঙ্গলু। এঁদের মধ্যে অচ্যুতানন্দ দূরদর্শনের ক্যামেরাম্যান ছিলেন। রুদ্র প্রসাদ ছত্তীসগঢ় পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর এবং মঙ্গলু কনস্টেবল ছিলেন। নির্বাচনের খবর ‘কভার’ করতে দিল্লি থেকে ছত্তীসগঢ় এসেছিলেন দূরদর্শনের তিন কর্মী। ধীরজ কুমার, অচ্যুতানন্দ সাউ এবং মোরমুক্ত শর্মা। এঁদের মধ্যে ধীরজ সাংবাদিক এবং মোরমুক্ত লাইট অ্যাসিস্ট্যান্ট। সাংবাদিকের দলটির আগেই মোটরবাইক করে এলাকা টহল দিচ্ছিল স্থানীয় পুলিশের বাহিনী। সকাল এগারোটা নাগাদ সেই বাহিনীর উপরই হামলা চালায় মাওবাদীরা। ডেপুটি ইনস্পেক্টর জেনারেল (মাওবাদী দমন অভিযান) সুন্দররাজ পি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, পুলিশের দলটি মাওবাদীদের নিশানায় ছিল। ওই দলের ঠিক পিছনেই
ছিলেন সাংবাদিকরা।
আগামী ১২ ও ২০ নভেম্বর ছত্তীসগঢ়ে ভোট। রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতেই মাওবাদীরা পর পর হামলা চালাচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করেছিল প্রশাসন। কিন্তু রাতের দিকে ছত্তীসগঢ় পুলিশের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ভোটের সঙ্গে এই হামলার কোনও সম্পর্ক নেই। রাস্তা তৈরির একটি প্রকল্পে হামলা চালানোই ছিল মাওবাদীদের মূল উদ্দেশ্য। তবে আজকের হামলার পর পরই দন্তেওয়াড়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে বাড়ানো হয়েছে সিআরপিএফ, বিশেষ টাস্ক ফোর্স এবং ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ
গার্ড-এর সংখ্যা।
আজকের হামলার কড়া নিন্দা করেছেন ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর। মৃত সাংবাদিকের পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাঠৌর। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘‘ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী হামলার কড়া নিন্দা করছি। আমাদের ক্যামেরাম্যান অচ্যুতানন্দের আকস্মিক মৃত্যুতে গোটা দূরদর্শন পরিবার শোকাহত। ওঁর পরিবারের পাশে আমরা সবাই আছি। সাংবাদিকরা যে ভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে যান, তাঁর
জন্য ওঁদের কুর্নিশ।’’ সেই সঙ্গেই মন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘এই ধরনের
হামলা আমাদের মনোবল দুর্বল করতে পারবে না। আমরা এই লড়াইয়ে জিতবই।’’
ছত্তীসগঢ়ে একের পর এক মাওবাদী হামলা নিয়ে আজ রাজ্যের বিজেপি সরকারকে এক হাত নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। হামলার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্র আর রাজ্য সব জায়গাতেই অপদার্থ সরকার বসে।’’