নির্বাচনী জনসভায় মনমোহন সিংহ, তরুণ গগৈ। বুধবার গুয়াহাটিতে। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
তাঁকে সরিয়েই ক্ষমতা দখল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু রাজনৈতিক চর্চায় তাঁর নাম সচরাচর তোলেন না প্রধানমন্ত্রী। প্রতিপক্ষ হিসেবে সামনে আনেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীকেই।
কিন্তু আজ অসমে নির্বাচনী জনসভায় নরেন্দ্র মোদীকেই নিশানা করলেন তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহ। দেশ পরিচালনায় মোদী পুরোপুরি ব্যর্থ বলেও অভিযোগ তুললেন তিনি।
পাশাপাশি তরুণ গগৈয়ের প্রশংসা করে অর্থনীতিবিদ মনমোহন বলেন, ‘‘১৫ বছরে বিরাট অর্থসঙ্কট থেকে অসমকে বের করে এনেছেন গগৈ। দিয়েছেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তাঁর প্রয়াসে রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’’
অন্য দিকে, মোদীর বিরুদ্ধে ধোঁকাবাজির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে লম্বাচওড়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী। কিছুই করতে পারলেন না। উন্নয়নের বদলে এখন আর্থিক মন্দা দেশকে গ্রাস করছে। কৃষি উৎপাদন মার খাচ্ছে। শিল্প নেই। নেই কর্মসংস্থান।’’ প্রশ্ন তুললেন মোদীর বিদেশ সফরের তাৎপর্য নিয়েও।
এ দিন গুয়াহাটির চানমারিতে ওই জনসভায় মনমোহনের সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্ত।
মোদীর বিদেশ সফর নিয়ে কটাক্ষ করে মনমোহন বলেন, ‘‘কী লাভ হচ্ছে ঘনঘন এদেশ-ওদেশ ঘুরে? পাকিস্তানে গেলেন, কিন্তু পাক সন্ত্রাসবাদীদের দাপাদাপি বন্ধ হচ্ছে না। জন্মু-কাশ্মীরে শান্তি নেই। পঠানকোটের মতো ঘটনাও ঘটল।’’
কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ, ‘‘ওঁরা বড় ক্ষমতালোভী। অরুণাচলপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে নির্বাচিত সরকারকে কাজ করতে দেয়নি। যে করেই হোক, ক্ষমতা দখল করা চাই।’’
গত কালই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ নির্বাচনী প্রচারে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীর সঙ্গে মনমোহন সিংহকেও টেনে এনেছিলেন। অমিতের অভিযোগ ছিল— অসমের সাংসদ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মনমোহন। কী করেছেন নিজের আসনের জন্য? কেন আজও এখানে সমস্যার পাহাড়? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন অবশ্য সে সব প্রশ্নের জবাবের দিকে যাননি। বরং অসম তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা এনে দিয়েছে বলেই দায় সারেন।
মুখ্যমন্ত্রী গগৈ অবশ্য মনমোহন সিংহের ১০ বছরের কার্যকালের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জানান, এমএনরেগা, এনআরএইচএম, খাদ্য নিরাপত্তা আইন মনমোহনের আমলেই চালু হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি গগৈকে অনুপ্রবেশকারীদের মদতদাতা হিসেবে তুলে ধরছে। স্লোগান দিচ্ছে অসমিয়া জাতীয়তাবাদের। গগৈ এ দিন প্রধানমন্ত্রী মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। কোনও এক জন অনুপ্রবেশকারীকে তিনি রক্ষা করছেন, প্রমাণ করতে আহ্বান জানান তিনি। গগৈ বলেন, ‘‘তা করতে পারলে শুধু মুখ্যমন্ত্রিত্ব নয়, রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’ পাশাপাশি প্রশ্ন তোলেন, তিনি অনুপ্রবেশকারীকে রক্ষণাবেক্ষণ দিলে প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করছেন কী? তাঁদের কি কোনও দায়িত্ব নেই?
গগৈ শুনিয়ে দেন, এক জন বিদেশিকেও তিনি অসমে রাখার পক্ষপাতী নন। তাই বলে বিদেশি খোঁজার নামে প্রকৃত ভারতীয়দের হয়রানিও তিনি মেনে নেবেন না।