সমর্থন: কংগ্রেসের প্লেনারিতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং অশোক গহলৌত। রবিবার দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই
বিদেশনীতি নিয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনের বক্তৃতায় রবিবার মনমোহনের সাফ কথা— ভুল নীতি অনুসরণ করে মোদী সরকার সমস্ত প্রতিবেশী দেশকে চটিয়ে বসেছেন। যার ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত আজ কার্যত একা।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আজ চরম উত্তেজক অবস্থায়। চিনের সঙ্গেও ডোকলাম নিয়ে অচলাবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছিল, যুদ্ধ বাধার উপক্রম হয়েছিল। বাংলাদেশ, নেপাল, মলদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভুটানের মতো ভারতের বরাবরের বন্ধু দেশও আজ বিভিন্ন সময়ে ভারতের পাশে থাকছে না। বক্তৃতায় এই বিষয়গুলি উল্লেখ করে মনমোহন বলেন, কংগ্রেস বরাবর প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলার নীতি নিয়ে এগিয়েছে। কিন্তু এই সরকারের ভুল নীতিতে প্রতিবেশী দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করে নয়, গলা ফুলিয়ে কথা বলে নয়, শান্তিপূর্ণ পথে আলোচনার মাধ্যমেই এক মাত্র প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সমস্যা মেটানো সম্ভব।’’
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলির সম্পর্কে মনমোহন বলেছিলেন, ‘‘আমরা আমাদের নীতি বদলাতে পারি, প্রতিবেশী দেশ বাছাইয়ের কোনও সুযোগ আমাদের নেই।’’ এ দিনও মনমোহন পাকিস্তান সম্পর্কে বলেন, ‘‘সবার আগে মেনে নিতে হবে, পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সেই মর্যাদা তাদের দিতে হবে।’’ তাঁর কথায়, প্রতিবেশীকে আস্ফালন করলে কাজ হোক বা না হোক, শান্তি যে নষ্ট হয়— এটা সরকারকে বুঝতে হবে। সীমান্ত পারের সন্ত্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেও মনমোহন বলেন, কিন্তু আস্ফালনে যে সে সমস্যার সামাধান হয় না, পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরাল হয়ে ওঠায় সেটা প্রমাণিত হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে অনেক বিষয়েই আমাদের মতভেদ রয়েছে। সেগুলি নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে আলোচনা চালিয়েই একমাত্র তাদের সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার পথ থেকে সরিয়ে রাখা সম্ভব।’’ সংঘাতের পথ যে দু’দেশেরই চরম ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে দেন মনমোহন।
আরও পড়ুন: কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু রাহুলের
জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি ফের উত্তেজক হয়ে ওঠার জন্যও মোদী সরকারের ‘ভুল একলা চলো’ নীতিকেই দায়ী করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর কথায়— জম্মু ও কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সে কথা মনে রেখেও ওই রাজ্যের সমস্যাগুলির চরিত্র বুঝে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ করা জরুরি। কিন্তু মোদী সরকার ভাবছে, কারও কথায় কান না-দিয়ে তারা একক ভাবেই কাশ্মীরকে ঠান্ডা করে দিতে পারবে। তাদের দুই শাখা একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে চলেছে। আর তাতে প্রতিদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে কাশ্মীরে। মনমোহন বলেন, ‘‘এক দিকে ভুল বিদেশনীতির ফলে সীমান্ত ও নিয়ন্ত্রণ রেখায় সুরক্ষা কমেছে, সীমান্ত পারের সন্ত্রাস বেড়েছে। সঙ্গে কাশ্মীরে অভ্যন্তরীণ জঙ্গি উপদ্রব যে ভাবে বেড়ে চলেছে, গোটা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। মোদী সরকার এই পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না।’’