সেনাবাহিনী এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতীক। তাদের নিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে নাম না করে নরেন্দ্র মোদীকে পরামর্শ দিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
বায়ুসেনার জন্য রাফাল যুদ্ধবিমান কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আজও মোদীকে খোঁচা দিয়ে টুইট করেছেন রাহুল গাঁধী। লিখেছেন, ‘‘চুরি করে যাঁরা আপনাদের অসম্মান করেছেন, তাঁদের বিচার হবে।’’ বিতর্কের মোড় ঘোরাতে চলতি সপ্তাহেই তিন দিন ধরে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর বর্ষপূর্তি নিয়ে মাততে চলেছেন মোদী। তার আগেই ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রশস্তি করে মনমোহন আজ তুলোধোনা করলেন মোদীকে। যদিও এক বারও নাম করলেন তাঁর।
মোদী জমানা শুরু হতেই বিচার ব্যবস্থা থেকে নির্বাচন কমিশনে আরএসএসের লোক ঢুকতে শুরু করেছে বলে রাহুল আগেই অভিযোগ করেছেন। মনমোহন আজ প্রয়াত সিপিআই নেতা এ বি বর্ধন স্মারক বক্তৃতায় একে একে স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রতিটি সাংবিধানিক সংস্থার দায়িত্বের কথা। রামমন্দির নিয়ে রায়ের আগে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এলেন বাবরি ধ্বংসের প্রসঙ্গও। বাবরি ধ্বংসকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতায় আঘাত’ ও দিনটিকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী।
এর পরেই তীক্ষ্ণ সমালোচনা এল সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের, যেখানে হিন্দুত্বকে ‘জীবনযাত্রার একটি ধারা’ বলা হয়েছিল। যা নিয়ে উল্লসিত হয়েছিল বিজেপি-আরএসএসের লোকজন। মনমোহনের মতে, ‘‘অনেকেই মনে করেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত খারিজ হওয়া উচিত। এই রায় রাজনীতির ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনা রক্ষার প্রাথমিক কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হওয়া উচিত নয় বিচার ব্যবস্থার। নির্বাচন কমিশনকেও এটি সুনিশ্চিত করতে হবে। সেনাবাহিনীকেও রাজনৈতিক চক্রান্ত ও হিসেব-নিকেশ থেকে দূরে রাখতে হবে। যাতে কোনও ভাবেই এটি কলুষিত না হয়।’’
এ বি বর্ধন স্মারক বক্তৃতার বিষয়ই ছিল, সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষা করা। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ধর্মনিরপেক্ষতার ভিতে তৈরি হয়েছে দেশের সংবিধান। আরএসএস যে ভাবে ভারতকে ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ হিসেবে দেখতে চায়, তা খণ্ডন করতে মনমোহন টেনে আনেন জওহরলাল নেহরুর প্রসঙ্গ। নেহরুর ঘোষণা ছিল, তিনি থাকতে দেশকে কখনওই হিন্দুরাষ্ট্র হতে দেবেন না। এমনকি বাজপেয়ীও পরে বলেছেন, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষতা স্বাধীনতার পরে বিদেশ থেকে আনা কোনও ভাবনা নয়। দেশের আত্মা ও সংস্কৃতিতে তা জড়িয়ে আছে। এর পর মোদীকে খোঁচা দিয়ে মনমোহনের মন্তব্য, ‘‘কোও সভ্য দেশ সংখ্যালঘু, বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য কী করছে, সেটাই দেশের পরিচয়। সংবিধান লেখার সময়েও নেতারা এই মূল বিষয়টিই মাথায় রেখেছিলেন।’’