১৯৯১-এ আর্থিক সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন মনমোহন সিংহ। সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় তখন লোকসভায় সিপিএমের দলনেতা। রোজই মনমোহনের উদারবাদী সংস্কারের নীতিকে নিশানা করছেন তিনি।
আজ দিল্লিতে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণসভায় এসে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন বললেন, ‘‘উনি হয়তো দলের চাপে সংসদে আমার নীতির সমালোচনা করতেন। কিন্তু ওঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল, আমার বাধ্যবাধকতাও উনি বুঝতেন।’’
দিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে উপস্থিতদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি, নাম না করেই একদিকে প্রকাশ কারাটের মতো কট্টরপন্থী সিপিএম নেতা, অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী সরকার তথা বিজেপিকে বিঁধলেন মনমোহন সিংহ। সোমনাথবাবুর সহকর্মী, পরিচিত, বন্ধুদের আয়োজিত এই স্মরণসভায় মনমোহনের ঠিক আগেই প্রাক্তন-উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি বলেছিলেন, ‘‘সোমনাথ যে সংসদীয় গণতন্ত্র, সাংবিধানিক নীতি রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন, তাকেই এখন আঘাত করা হচ্ছে।’’সেই সূত্র ধরেই মনমোহন বলেন, ‘‘সোমনাথের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ হবে সংবিধানের পক্ষে রুখে দাঁড়ানো।’’
দলের নির্দেশ সত্ত্বেও সোমনাথের স্পিকার পদ না ছাড়ার প্রসঙ্গ তুলে মনমোহনের বক্তব্য, ‘‘প্রথম ইউপিএ সরকারের সঙ্গে বামেদের সমস্যা হয়। সিপিএম সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে বিজেপি-র সঙ্গে হাত মেলায়। সেই কঠিন সময়ে সোমনাথ বলেছিলেন, উনি সংবিধান রক্ষা করবেন। স্পিকার পদের মর্যাদা রক্ষা করবেন। পার্টিকে ভালবাসলেও উনি বলেছিলেন, পার্টি সাংবিধানিক মূল্যবোধের বাইরে নয়।’’
এই স্মরণসভায় প্রকাশ কারাট হাজির হননি। সোমনাথবাবুর মৃত্যুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁর বিষয়ে মুখই খোলেননি তিনি, সাংবাদিকদের হাজার অনুরোধেও নয়। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কলকাতায় ছিলেন। তবে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তপন সেন ছিলেন স্মরণসভায়। ছিলেন প্রাক্তন সিপিএম নেতা সমীর পুততুণ্ড। তাঁর কথাতেও মনমোহনের কথারই প্রতিফলন মিলেছে। সমীরবাবু দাবি করেন, স্পিকার পদ এবং জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্ব সংক্রান্ত বিতর্কের আগেও ১৯৯১ সালের আর্থিক সংস্কার নিয়ে পার্টির সঙ্গে সোমনাথের মতানৈক্য হয়েছিল। তিনি আর্থিক সংস্কারকে সমর্থন করেছিলেন। আপত্তির সুরে তপন বলেন, ‘‘এটা আমার কাছে নতুন খবর।’’
রাজনীতির সঙ্গে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণও করেছেন মনমোহন। সোমনাথকে ‘পিতৃতুল্য’ বলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জানান, অমৃতসরের
হিন্দু কলেজে তিনি তখন ছাত্র। কলেজের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন সোমনাথবাবুর পিতা নির্মলচন্দ্র। মনমোহন বলেন, ‘‘পুরস্কার বিতরণের সময় উনি খেয়াল করেন, আমি সব গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারগুলো পাচ্ছি। উনি তখন বলেন, ইয়ং ম্যান, তোমার সামনে উজ্জ্বল কেরিয়ার।’’ সোমনাথবাবুর স্ত্রী রেণুদেবীর আতিথ্যের উল্লেখ করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দু’মাস আগে ফোনে কথা হয়েছিল সোমনাথবাবুর সঙ্গে। অসুস্থ ছিলেন বলে দেখা হয়নি।’’