মণিপুরের শরণার্থী শিবিরে ছোটদের ফুটবল প্রশিক্ষণ। —নিজস্ব চিত্র।
মণিপুরের বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে এখন হাজার হাজার ভিটেহারা শিশুর ভিড়। যারা এপ্রিল পর্যন্ত নিজের বাড়িতে খেলনা নিয়ে, উঠোনে সকলে দল বেঁধে ব্যাট-বল হাতে খেলে বেড়াত, তারাই এখন শিবিরের অস্বাস্থ্যকর ঘেরাটোপে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে। সেই কিশলয়দের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে এল দেশ তথা এশিয়ার সম্ভবত একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের ফুটবল দল।
রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এলজিবিটিকিউ প্লাস সংগঠন মণিপুরের ‘ইয়া অল’ ২০২০ সালে ফুটবল দল গড়ে। সেই দলই এখন মণিপুরে শরণার্থী শিবিরের ছোটদের বিনামূল্যে ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রায় ৬০ হাজার শরণার্থীর অন্তত ৪০ শতাংশই ছোট। এই বয়সেই তাঁরা যে হিংসা, রক্তপাত ও ঘৃণা দেখেছে, চোখের সামনে বাড়ি পুড়ে যাওয়া দেখেছে তার ছাপ ভয়ানক ভাবেই পড়েছে বাচ্চাদের মনে। প্রায় চার মাস ধরে ঘরছাড়া বাচ্চাদের মন একটু অন্য দিকে নিয়ে যেতেই ইয়া অল ফুটবল দল বাচ্চাদের ফুটবল প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে।
ইয়া অল-এর প্রতিষ্ঠাতা সাদাম হানজাবাম বলেন, নিরীহ শিশুদের মন থেকে হিংসার ছাপ সরানোর জন্য তাঁদের নিরাপদ স্থানে, প্রাণখোলা আনন্দের সুযোগ করে দেওয়াটা খুব দরকার ছিল। তাই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। ফুটবল সব বাধা, দেওয়াল ভেঙে দেয়। তৈরি করে শৃঙ্খলা, সম্প্রীতি ও ইতিবাচক মানসিকতা।
সেই উদ্দেশ্য নিয়েই ইয়া অল ‘ফুটবল টু হিল, স্পোর্টস ফর পিস’ স্লোগান নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে ফুটবল অনুশীলন শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই তারা প্রায় ২০০ শিশুকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বর্তমানে বিষ্ণুপুরের একটি ত্রাণ শিবিরের পাশে নামবোল ওইনাম ফুটবল মাঠে তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। শিশুদের আনন্দ দেখে স্থানীয় প্রশাসন ও বাবা-মায়েরা আপ্লুত। বাবা-মায়েদের বক্তব্য, স্কুল খোলার পরে বা সরকারের তরফে দক্ষতা বিকাশের কর্মসূচি শুরু করা হলেও ছোটরা তেমন আনন্দ পাচ্ছিল না। কিন্তু ফুটবল খেলা শুরু করার পর থেকে তাঁদের মুখের উজ্জ্বলতা ফিরে এসেছে। ফিরে এসেছে শৈশব।
তৃতীয় লিঙ্গের ফুটবলাররা শৈশব থেকেই বিভিন্ন হেনস্থা ও অপমানের শিকার হয়েছেন। ইয়াইফাবি সানাসাম বলেন, “শৈশবের নানা যন্ত্রণা আমরা বুঝি। তাই বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে আমাদেরও ভাল লাগছে। সমাজে কটূক্তি পেয়েই আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু এখন ফুটবল শেখানোর বিনিময়ে বাচ্চাদের থেকে নির্মল ভালবাসা ও তাঁদের বাবা-মায়েদের কাছ থেকে যে শ্রদ্ধা আমরা পাচ্ছি তা আগে কখনও পাইনি।”