প্রতীকী ছবি।
শনিবার প্রকাশিত হবে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা। তার ৪৮ ঘণ্টা আগে আত্মঘাতী হলেন করিমগঞ্জের রাতাবাড়ি এলাকার প্রীতিভূষণ দত্ত।
তিনি নিজে যে ভারতীয়, এনআরসি কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু খসড়ায় তাঁর স্ত্রী নমিতার নাম নেই। প্রীতি স্ত্রীকে বলতেন, ‘‘তোমাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেবে। ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখলেও আমাকে দেখতে দেবে না।’’ নমিতা জানান, প্রীতির ভয় বাড়ছিল। বিষয়টা মানসিক রোগের দিকে যাচ্ছে, বুঝে নমিতা গত কাল সন্ধ্যায় তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। ফিরে এনআরসি-র কাগজপত্র বার করেন প্রীতি। খাওয়াদাওয়া সেরে ঘুমোতে যান। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ দরজা খোলার শব্দ পান নমিতা। পরে প্রীতি না-ফেরায় বাইরে গিয়ে দেখেন, স্বামীর দেহ ঝুলছে।
নমিতার বাবার বাড়ি ত্রিপুরার ধর্মনগরে। তিনি বাবার নথিপত্র পেশ করেছিলেন। সেগুলি যাচাইয়ের জন্য ত্রিপুরায় পাঠানো হয়। ফিরে আসেনি। নিয়ম মেনে নমিতা পরে আবেদন করেন। এ বার নথিপত্র করিমগঞ্জেই খতিয়ে দেখা হয়। তবু সংশয় কাটেনি ৫৪ বছরের প্রীতির। নমিতার প্রশ্ন, ‘‘এত চিন্তা করে একলা ফেলে গেলে!’’
সম্পূর্ণ এনআরসি প্রকাশের আগে গুয়াহাটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ডি-ভোটারের সংখ্যা ১,১৩,৭৩৮। বিদেশি সংক্রান্ত মামলা চলছে ২,০৭,৩১১ জনের নামে। ১,১৭,১৬৪ জনকে বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে। খসড়া থেকে বাদ পড়া চল্লিশ লক্ষের মধ্যে ৩ লক্ষ ৯৬ হাজার মানুষ আবেদন জানাননি। নাম বাদের তালিকায় আছেন ১ লক্ষ ২ হাজার জন। ডি-ভোটার, খসড়াছুটদের নিয়ে কাজ করা আইনজীবীদের হিসেব, এ ভাবে সরাসরি ১০ থেকে ১২ লক্ষ মানুষ বাদ পড়ছেন।
১৯৮৩ সালে অসম আন্দোলনের জেরে ডালিমবাড়িতে ‘শহিদ’ মদন মল্লিক ওরফে সরকারের পরিবারকে বিদেশি ঘোষিত হওয়ায় নগাঁওয়ে বাঙালি পরিষদ সরব। পরিবারের অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক ভাবনা থেকেই অসম সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শহিদের পরিবারকে বিদেশি সাজাতে চাইছে পুলিশের সীমান্ত শাখা। তাঁরা আগাম জামিনের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।