অসহায়: সাইকেলে দেহ বেঁধে বাড়ি ফেরা। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।
গ্রামগুলির দূরবস্থার কথা তাঁদের জানাই ছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ‘নির্দেশে’ সেই দুর্দশার ছবি খতিয়ে দেখতে গিয়ে সরাসরি তার কবলে যে পড়বেন এমনটা পদস্থ সরকারি আমলাদের ধারণাতেই ছিল না। বাঁশের সাঁকো পেরোতে গিয়ে সাঁকো ভেঙে নদীতে হাবুডুবু খেলেন তাঁরা। হাড়ে হাড়ে বুঝলেন কী ‘অথৈ জলে’ রয়েছেন অসমের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ!
ঘটনার শুরু গত কাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। দেখা যায়, এক ব্যক্তি একটি মৃতদেহ সাইকেলে বেঁধে হেঁটে চলেছেন গ্রামের মেঠো, পায়ে চলা পথে। জানা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা এলাকা, মাজুলির বালিজান গ্রামের ১৮ বছরের ডিম্বল দাস সোমবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। তাঁকে সাইকেলে মাজুলি জেলার গড়মুড় হাসপাতালে নিয়ে আসেন বাবা-দাদারা। সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপরে ওই সাইকেলেই ভাইয়ের দেহ বেঁধেছেঁদে গ্রামের পথে রওনা হন দাদা। গত রাতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এই ভিডিও দেখার পর রাতেই স্বাস্থ্য অধিকর্তা রথীন্দ্র ভুঁইয়াকে মাজুলি পাঠান। সরেজমিনে সমস্ত খোঁজখবর নিয়ে তাঁকে রিপোর্ট দিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাতে মাজুলি পৌঁছে আজ সকালে অতিরিক্ত জেলাশাসক নরেন দাসকে সঙ্গে নিয়ে রথীনবাবু ও স্বাস্থ্য দফতরের আরও তিন কর্তা প্রথমে হাসপাতালে যান। সেখানে কথাবার্তা বলে তাঁরা মোটরবাইকে বালিজানের পথে রওনা দেন।
ডিম্বলের পরিবারের বক্তব্য, বছরের পর বছর এখানকার মানুষ অসুস্থ হলে বা মারা গেলে সাইকেলই ভরসা। গ্রামের বাইরে যেতে সম্বল বাঁশের সাঁকো। তাতে গাড়ি ওঠার প্রশ্নই নেই। শহুরে নেতা বা সরকারি কর্তারা বাইরে থেকে এক দিনের জন্য এসে গ্রামবাসীদের নিত্য দুর্দশার সঠিক আঁচ পান না। ছবিটা বদলে দেয় ওই বাঁশের সাঁকোই। মোটরসাইকেলে কর্তাদের সাঁকো পার করানোর সময়েই তা ভেঙে পড়ে। সুবনসিরির জলে পড়েন সরকারি আমলারা। জখম হন এডিসি। স্থানীয় মানুষ, পুলিশকর্মীরা উদ্ধার করেন তাঁদের। পরে সকলে নৌকা করে গ্রামে পৌঁছন। রথীন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘এখানকার দুরবস্থা সরেজমিনে দেখলাম। মুখ্যমন্ত্রীকে বিশদে রিপোর্ট দেব।’’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘যে এলাকায় রাস্তাই নেই, সেখানে অ্যাম্বুল্যান্স যাবে কী করে? পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করব।’’ রাস্তাঘাটের অভাব বন্যাক্রান্ত মাজুলির দীর্ঘদিনের সমস্যা। পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, ‘‘মাজুলিতে ইতমধ্যেই ৫০ কোটি টাকার কাজ শুরু করেছি। মাজুলি খুব বড় ও প্রত্যান্ত এলাকা। কোথায় সেতু-সড়ক দরকার, তার সমীক্ষাও করা হবে।’’