নোট বাতিলের জেরে আম জনতার হয়রানির প্রতিবাদ করতে শিবসেনাকে পাশে নিয়ে রাজ্যের দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিএমের প্রবল সমাসোচনার মুখে পড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যে শিবসেনা প্রাসঙ্গিক শক্তি নয়। কিন্তু নিজের স্বার্থে তৃণমূল নেত্রী যে ভাষা ও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সঙ্গে নিতে দ্বিধা করেন না, তা দেখানোই বিরোধীদের মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গ রাজনীতিতে মেরুকরণ যখন ক্রমশ তীব্র হচ্ছে, সেই সময়ে সংখ্যালঘু মন জয়ই বিরোধীদের এই আক্রমণের নেপথ্যে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘‘মুসলিমদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং মুম্বই থেকে বাঙালি-সহ ভিন্ প্রদেশের লোকজনকে খেদানোর রাজনীতি যারা করে, সেই শিবসেনা এখন দিদির বন্ধু!’’ একই সুরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলছেন, ‘‘রাজ্যবাসী হিসাবে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে গর্ববোধ করি। কিন্তু যে ভাবে ৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিলের বিরুদ্ধে শিবসেনার মতো একটি ভাষা ও ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলকে নিয়ে মমতা রাষ্ট্রপতির কাছে গেলেন, তা ধিক্কারজনক!’’ জনতার হয়রানির প্রতিবাদ ও তৃণমূলের হাতে-থাকা ‘কালো টাকা’ উদ্ধারের দাবিতে শনিবার কলকাতায় মিছিলেরও ডাক দিয়েছেন অধীর-মান্নানেরা।
একই যুক্তিতে তৃণমূল নেত্রীকে বিঁধেছে সিপিএমও। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, কালো টাকা উদ্ধার অভিযানের পক্ষে তাঁরা সবাই। প্রতিবাদ হচ্ছে শুধু মানুষের অহেতুক হয়রানির জন্য। মানুষের সুরাহার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু সারদার মতো চিট ফান্ডের টাকা লুঠ হয়েছে, নারদা ঘুষ-কাণ্ডে অভিযুক্তেরা পদে বহাল আছেন। এই অবস্থায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালো টাকা নিয়ে প্রতিবাদ করবেন, এটা কোনও দল বিশ্বাস করেনি। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য খারাপ লাগছে! দিল্লিতে তাঁর ফ্লপ শো-য় হাজির হয়েছে শিবসেনার মতো সাম্প্রদায়িক শক্তি!’’ বাম ও কংগ্রেস নেতাদের দাবি, নানা কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে বিজেপি-র সঙ্গে বোঝাপড়া হয়েছিল তৃণমূলের। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তাগাদা দেওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আবার সক্রিয় হতেই মোদী সরকারের শরিক শিবসেনাকে কাছে টেনে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে মমতা কেন্দ্রের উপরে পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে চান। তা ছা়ড়া, যে ভাবে একের পর পর নির্বাচনে বা বিরোধীদের জনপ্রতিনিধি ভাঙাতে তৃণমূল বিপুল খরচ করেছে, সেই টাকার রং নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী নেতারা।
তৃণমূল অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলছে, মমতা ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদের বক্তব্য, ‘‘৫০০ ও হাজার টাকার নোট বাতিল-সহ কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে দেশের কোটি কোটি মানুষ যে সমস্যায় পড়েছেন, মোদী সরকারের শরিক শিবসেনা মমতার সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। মমতা শিবসেনার সঙ্গে যাননি। এনডিএ-র শরিক শিবসেনাই মমতার সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে!’’ শাসক দলের আর এক সংখ্যালঘু সাংসদ ইদ্রিস আলির প্রশ্ন, ‘‘পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করলেও কি মমতা, শিবসেনা একসঙ্গে প্রতিবাদ করতে পারবে না? তখনও কি মমতাকে সাম্প্রদায়িক বলা হবে?’’ দুই সাংসদেরই দাবি, মমতা শিবসেনার সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হলেও এ রাজ্যে সংখ্যালঘুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে না। কারণ, মমতার আন্দোলন বিজেপি-র বিরুদ্ধে। আর এক ধাপ এগিয়ে তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘শিবসেনা নয় শুধু, সঙ্গে ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লাও ছিলেন। এতেই স্পষ্ট, মমতা সবাইকে নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারেন।’’