রাত পোহালে আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠক। ফ্রান্সে সন্ত্রাসের পটভূমিকায় ভারতের মাটিতে নাশকতা দমনে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয়ে জোর দিতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু কালকের এই বৈঠকেও কেন্দ্রের ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে সরব হতে চলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এক দশক পর আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠক ডেকে নরেন্দ্র মোদী যখন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভাবনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চলেছেন, ঠিক তখনই মমতা বলতে চলেছেন— সব ব্যাপারে রাজ্যের অধিকার লঙ্ঘন করে কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে চলেছে। সংবিধানের যৌথ তালিকায় থাকা বিষয়গুলি নিয়েও রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে সরাসরি টাকা দেওয়া হচ্ছে পঞ্চায়েতে। শিক্ষা ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকারের অধিকার ভঙ্গ করে কেন্দ্র তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে চলেছে।
বৈঠকে অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকেই এ ব্যাপারে সহমত প্রকাশ করবেন বলে মমতাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে রাতে কথা হয়েছে মমতার। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল তো অনেক দিন থেকেই এ বিষয়ে সরব। সরকারিয়া কমিশনের পর পুঞ্ছি কমিশন গড়া হয়েছিল ৯ বছর আগে। কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দিচ্ছেন— সময় এসেছে, নতুন একটি কমিশন গড়ার। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ণের সময় এসেছে।
মমতার বক্তব্য, নতুন কমিশন করে লাভ কী? পুরনো কমিশনের সিদ্ধান্তগুলি কি বাস্তবায়িত হয়েছে? রাজ্যের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একের পর এক চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত দু’বছরে কোন সমস্যার সমাধান এই সরকার করেছে? শুধু কেন্দ্রের এই ‘বিমাতৃসুলভ মনোভাব’ নয়, আর একটি অভিযোগ মমতা তুলছেন— তদন্তকারী সংস্থাকে অস্ত্র করে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজ্য সরকারগুলির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে কেন্দ্র।
আগামিকাল বৈঠক শুরু হবে সকাল দশটায়। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে চা খাবেন। ‘চায়ে-পে চর্চা’-র পর রাজনাথ সিংহ স্বাগত বক্তৃতা দেবেন। তার পর বলবেন প্রধানমন্ত্রী। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, রাজ্যগুলির সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সন্ত্রাস ও নাশকতা দমনে অধিক সমন্বয় এবং পুলিশ সংস্কার ও আধুনিকীকরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী। বিশেষত ফ্রান্সে জঙ্গি হানার পর সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে এ’টি।
মমতার বক্তব্য, সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্রকে সব সময়ে সাহায্য করবে রাজ্য। কিন্তু সন্ত্রাস দমনের নামে কেন্দ্রের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপও ঠিক নয়। এর আগে এক বার নতুন বিল এনে সাম্প্রদায়িকতার মোকাবিলায় রাজ্যকে এড়িয়েই আধাসামরিক বাহিনী পাঠানোর ক্ষমতা চেয়েছিল কেন্দ্র। সেই বিল আজও পাশ হয়নি। কাজেই সংঘাতের পথে না গিয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে চায় কেন্দ্র।
২৫ জুলাই মমতা আবার দিল্লি আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একান্ত বৈঠক হবে পরের দিন। তার আগে ২৫ জুলাই রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজে মোদী-মমতার দেখা হবে। সে দিন রাষ্ট্রপতি ভবনের নতুন মিউজিয়ামের উদ্বোধন হওয়ার কথা। ওই সফরে সংসদ ভবনেও যাবেন মমতা। তবে এ বারের সফরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়ানো এবং অ-বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে সমন্বয়কেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ২১ জুলাই সমাবেশের জন্য এ বার তাড়াতাড়ি চলে যেতে হচ্ছে।
আর্থিক বিষয় মমতার ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় রাজ্যের বকেয়া ঋণ মকুব করার দাবিতে তিনি সরব হয়েছিলেন। নতুন ইনিংস শুরুর পর এখন অরুণ জেটলির কাছেও একই দাবি জানিয়ে চলেছেন তিনি। এ বার সুর পাল্টে মমতা বলছেন— শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, দেশের অন্য রাজ্যগুলিও ঋণে জর্জরিত। রাজ্য থেকে সংগৃহীত অর্থ কেন্দ্রের কাছে আসে। তার পর রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্ব বাটোয়ারা করে কেন্দ্র। এই রাজস্ব সংগ্রহ এবং বণ্টন নিয়ে যে বিতর্ক, অবিলম্বে তার অবসান হওয়া উচিত।