উপলক্ষ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মেয়ের বিয়ে। কিন্তু চার দিনের দিল্লি সফরে গিয়ে এ বারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে খবর, সেই বৈঠকে রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে তিনি কেন্দ্রের সাহায্য চাইবেন।
এখনও পর্যন্ত যা খবর, মুখ্যমন্ত্রী ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছবেন। থাকবেন ১০ তারিখ পর্যন্ত। ৮ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক হওয়ার কথা। সংসদ ভবনেই এই সাক্ষাৎ হওয়ার কথা আছে। তবে এই সফরে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী বা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর সঙ্গে মমতার দেখা করার পরিকল্পনা নেই। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের বক্তব্য, ‘‘সংসদের সেন্ট্রাল হলে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সময় অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখন সনিয়া, রাহুল বা অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা হতে পারে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত সূচি নেই। এ বার কেবল মাত্র প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেই তাঁর দেখা-কথা হবে।’’
নবান্ন সূত্রের খবর, জেটলির পারিবারিক অনুষ্ঠান ছাড়াও দেওয়ালি মিলন-সহ কয়েকটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মমতা।
মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘পাওনা-গণ্ডা নিয়ে কথা বলতেই যাচ্ছি। আগেও চার-পাঁচ বার দেখা করে আর্থিক দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি। আমার কাজ আমি করে যাচ্ছি।’’
নবান্ন সূত্রের খবর, জলমগ্ন চেন্নাইয়ের জন্য তামিলনাডু সরকারকে দু’দফায় আর্থিক সাহায্য দিলেও এ রাজ্যকে এখনও পর্যন্ত এক টাকাও পাঠায়নি কেন্দ্র। অতিবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির হাল দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল পাঠালেও আজ পর্যন্ত এই খাতে কোনও সহায়তা পায়নি রাজ্য। তাই ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। মোদীর সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ তুলবেন তিনি। তবে এ রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও মোদীর সঙ্গে মমতার আলোচনা হতে পারে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। মমতা ঘনিষ্ঠ এক নেতার দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আগের বারের সাক্ষাৎপর্বে মুখ্যমন্ত্রী বিহারে যে তাঁর দল হারছে, সে কথা জানিয়ে এসেছিলেন। ভোটের ফলও তাই হয়েছে। বিহারের পর মধ্যপ্রদেশের উপনির্বাচনে হেরেছে বিজেপি। গুজরাতের পঞ্চায়েত ভোটেও ধরাশায়ী হয়েছে তারা।’’
তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আসতেই সারদা নিয়ে তৎপর হয়েছে সিবিআই। তাদের অভিযোগ, এটা বিজেপির চাপে হয়েছে। বিভিন্ন স্তরের তৃণমূল নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হবে বলে ইতিমধ্যেই জানা গিয়েছে। তার মধ্যে কয়েক জন প্রথম সারির নেতা এমনকী মন্ত্রীও রয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, গত জানুয়ারিতে সারদা কাণ্ডে মুকুল রায়কে সিবিআই ডেকে পাঠানোর পরে অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, সারদা তদন্তে গতি বাড়ছে। কিন্তু মার্চে মোদীর সঙ্গে মমতার বৈঠকের পর থেকে সারদা তদন্তে ঢিলে পড়ে। এ বারে সিবিআই ফের সক্রিয় হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মোদী-মমতা বৈঠকের পরে সারদা তদন্তের গতি কোন পথে যায়, সে দিকেই তাকিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ।
অবশ্য মোদীর সঙ্গে বৈঠক করে ফিরেই গুজরাতে তাঁর দলের মাথাব্যথা, পটেল সংরক্ষণের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ১১ ডিসেম্বর সাক্ষাৎ হওয়ার কথা। সূত্রের খবর, পটেলদের জন্য সংরক্ষণের দাবিকে নৈতিক সমর্থন দেওয়ার পাশাপাশি কী ভাবে সংরক্ষণ আদায় করতে হয়, সে বিষয়েও ওই নেতাদের পরামর্শ দেবেন মমতা।