কংগ্রেস সহ অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সঙ্গে সমন্বয় করে তৃণমূল যে এ বার সংসদে মোদী সরকারকে কোণঠাসা করতে চাইছে তার ইঙ্গিত দু’দিন আগেই দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার কাজেও তা শুরু করে দিলেন মমতা। মোদী সরকারের প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিলটি নিয়ে কংগ্রেস ও অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি ইতিমধ্যেই বিক্ষিপ্ত ভাবে আপত্তি জানাতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার, ওই বিল খারিজের দাবি তুলল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারও। নবান্নের বক্তব্য, নাগরিকত্ব বিলটিকে সামনে রেখে সমাজের মধ্যে অযথা বিভাজন তৈরি করতে চাইছে মোদী সরকার। বিলটিকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে উত্তর-পূর্বে অশান্তি দানা বাঁধছে। বিলটি খারিজ না করলে সেই আগুন আরও ছড়াবে।
নভেম্বর ১৬ তারিখ থেকে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা। এ দিন তৃণমূলের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়, নাগরিকত্ব সংশোধন বিল সরকার প্রত্যাহার না করলে সংসদ অচল করার কথাও ভাববেন তাঁরা।
কেন্দ্রের প্রস্তাবিত ওই সংশোধন বিলটি এখন যৌথ সংসদীয় কমিটির বিবেচনায় রয়েছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও অসমের মত জানতে কমিটির তরফে আজ বুধবার এই তিন রাজ্যের সরকারি প্রতিনিধিদের দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। সূত্রের খবর, নবান্নের তরফে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ ও অতিরিক্ত মুখ্য সচিব রাজীব সিংহ আজ ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
কিন্তু কী বলা হয়েছে ওই সংশোধন বিলে?
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন এনে বিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে যে সব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে এ দেশে এসেছেন, তাঁদের আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হবে না। ওই তিন দেশ থেকে এই ছয় সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিরা অবৈধ ভাবে ভারতে প্রবেশ করলেও তাঁরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যার অর্থ স্পষ্ট। একমাত্র মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। একমাত্র তাঁদেরই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আপত্তি এখানেই। কারণ, এই আইনের বাস্তবায়ন হলে বাংলায় সংখ্যালঘু সমাজে বড় ধরনের অসন্তোষ তৈরি হবে। এ ছাড়া বিলে আরও বলা হয়েছে, আগে ভারতের নাগরিকত্ব পেতে গেলে আবেদনের আগে অন্তত এক বছর এ দেশে বসবাস বাধ্যতামূলক ছিল। এবং আবেদনের আগের ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এ দেশে থাকতে হত। এই ১১ বছরকে কমিয়ে নতুন সংশোধনীতে মাত্র ছ’বছরের কথা প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলটি নিয়ে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটিতে তৃণমূলের তরফে রয়েছেন দলের দুই সাংসদ সৌগত রায় এবং ডেরেক ও ব্রায়েন। মঙ্গলবার সৌগতবাবু বলেন, ‘‘অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষরা সুবিধা পেলে কেন মুসলিমরা এর বাইরে থাকবেন? কমিটিতে এই বিলটি আলোচনা করে দেখা যাচ্ছে খুব সুচিন্তিত ভাবে বিজেপি নিজেদের বিভেদকামী পরিকল্পনা চরিতার্থ করতে চাইছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করাই এই বিলের মূল উদ্দেশ্য। সে জন্য এই বিল খারিজের দাবি তুলবে তৃণমূল।’’
ইতিমধ্যেই বিলটির বিরোধিতা করেছে অসমের অগপ, আজসুর মতো বিভিন্ন সংগঠন। আইন মন্ত্রকেরও এই বিলটিতে সায় নেই বলে সূত্রের খবর। আপত্তি তুলছে কংগ্রেসও। যৌথ সংসদীয় কমিটির সদস্য তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। এ দিনও কমিটির বৈঠক ছিল।
সেখানে বিলের বিরোধিতা করার পরে অধীরবাবু বলেন, ‘‘এই বিল ভারতের সংবিধানের মূল সুরের পরিপন্থী। কারণ, বিলটি সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সমানাধিকারের শর্ত লঙ্ঘন করছে। তাই সুপ্রিম কোর্টে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে এই বিল বাতিল হয়ে যাবে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোনও ভাবেই বলা যায় না যে কেবলমাত্র প্রতিবেশি দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরই আশ্রয় দেওয়া হবে। সুতরাং জটিলতা না বাড়িয়ে এই বিল বাতিল করার ব্যাপারে ভাবা হোক।’’