ত্রিপুরায় তৃণমূলের নতুন দফতরের উদ্বোধনে মুকুল রায়। রয়েছেন রাজ্য তৃণমূল সভাপতি রতন চক্রবর্তী, সুদীপ রায়বর্মন। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের প্রচারে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বারই বলেছিলেন, ২৯৪ আসনে তিনিই প্রার্থী! সেই বার্তাই ম্যাজিকের মতো কাজ করেছিল বাংলার নির্বাচনে। ত্রিপুরায় ‘পরিবর্তন’ ঘটাতে এ বার সেই এক স্লোগান তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল!
কংগ্রেসে ভাঙন ধরিয়ে সম্প্রতি ত্রিপুরায় প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠেছে তৃণমূল। তার পর আজ আগরতলায় দলের নতুন দফতরের উদ্বোধন করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুল রায়। তার পর জানিয়ে দিলেন, মমতার এ বার লক্ষ্য ২০১৮-এ ত্রিপুরার ক্ষমতা দখল করা। মুকুল বলেন, ‘‘ত্রিপুরার ৬০ আসনেও প্রার্থী সেই মমতাই।’’ বস্তুত ত্রিপুরা নিয়ে তৃণমূলের আগ্রহ নতুন নয়। কিন্তু অতীতের সেই সব চেষ্টায় বিশেষ জোর ছিল না। এ বারের ব্যাপারটা অন্য রকম। পশ্চিমবঙ্গে বাম-কংগ্রেস জোট হওয়ায় ত্রিপুরায় নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। রাজ্যে বাম সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিরোধিতা এতে ভোঁতা হয়ে গিয়েছে। সেই সুযোগটা নিতেই এখন উঠে পড়ে লেগেছেন মুকুলরা। আগরতলায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় শুরু করার মধ্যে দিয়েই তৃণমূলের আগ্রহ ও উৎসাহের প্রতিফলন ঘটছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
দলের নতুন দফতর উদ্বোধনের পর এ দিন আগরতলায় জনসভাও করেন মুকুলবাবু। বলেন, ‘‘১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে যেমন তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম হয়েছিল, তেমনই এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ত্রিপুরায় এখন তৃণমূলের সাংগঠনিক বিস্তার জরুরি। তৃণমূলই পারবে এ রাজ্যে সিপিএম তথা বাম জমানার অবসান ঘটাতে।’’ তৃণমূল নেতার কথায়, ৯ অগস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়েছিল। একই ভাবে ৯ অগস্ট মমতার নেতৃত্বে ‘সিপিএম ত্রিপুরা ছাড়ো’ আন্দোলন শুরু হবে। বাম ‘অপশাসন’ থেকে মুক্তি দিতে, ত্রিপুরার মানুষের জন্য ‘স্বাধীনতা’র ডাক দিতে আসবেন মমতা।
ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার’ কারণে ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে সে রকম দাগ কাটতে পারেনি দল। সেই ‘ব্যর্থতার’ সমস্ত দায় যে তাঁর তা স্বীকার করে নেন মকুল। সেই সূত্রে বলেন, ‘‘আমাদের এক মাত্র নেতা বা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি সবাই দলের কর্মী। আর রাজ্যের জনগণ তথা মা-মাটি-মানুষ দলের মূল সম্পদ।’’ তবে রাজ্য নেতাদের কাছে মুকুল এ দিন স্পষ্ট করে দেন, ৯ অগস্ট দলনেত্রীর জনসভা সফল করাই আপাতত লক্ষ্য। সে জন্য সংগঠনের মধ্যে কার কী দায়িত্ব হবে তা বুঝিয়ে দেন তিনি। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যাতে মাথা চাড়া না দেয় তাও পই পই করে জানিয়ে দেন। দলের মধ্যে টানাপড়েন যাতে না হয়, সে জন্য মঞ্চে দাঁড়িয়েই জানিয়ে দেন, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘আহ্বায়ক’ হবেন সুদীপ রায়বর্মণ।
তৃণমূলের দফতর উদ্বোধনের পরে আজও সভাস্থলে রাজ্যে তৃণমূলের সভাপতি সুরজিৎ দত্ত হাজির ছিলেন না। তবে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তী, দলের প্রাক্তন সভাপতি অরুণ ভৌমিক-সহ সদ্য কংগ্রেস ত্যাগী ছয় বিধায়কই সভায় ছিলেন।