মুখ্যমন্ত্রীদের ডাকুন বৈঠকে, ৩ চিঠি মমতার

রাজ্যের প্রতি আর্থিক বরাদ্দ কমানো ও কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঢেলে সাজা নিয়ে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এই সংক্রান্ত পরপর তিনটি চিঠি গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:৩০
Share:

রাজ্যের প্রতি আর্থিক বরাদ্দ কমানো ও কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঢেলে সাজা নিয়ে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকার দাবি তুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি পাঠিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি নয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এই সংক্রান্ত পরপর তিনটি চিঠি গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে।

Advertisement

মমতার বক্তব্য, মোদীর বিরুদ্ধে তাঁর কোনও ব্যক্তিগত অভিযোগ নেই। অভিযোগটা হল পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বঞ্চনার। রাজ্যের প্রতি আর্থিক বরাদ্দ ছাঁটাই এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো তিনি মানবেন না। এখানেই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন মমতা। মোদীর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, বৈঠক করতে রাজি প্রধানমন্ত্রীও। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি ঢেলে সাজা নিয়ে আলোচনা হয়। সে সময়ই মোদী জানান, এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই। কারণ রাজ্যগুলিই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ইঞ্জিন।

কেন্দ্রীয় প্রকল্পে টাকা কমানোর পিছনে মোদী সরকারের যুক্তি হল, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে এখন কর বাবদ আয়ের ৪২ শতাংশ অর্থ রাজ্যগুলির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। আগে মাত্র ৩২% অর্থ দেওয়া হতো। কিন্তু এই যুক্তি মানতে রাজি নন মমতা। তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সিংহভাগ দায় কেন্দ্রকেই নিতে হবে। কর বাবদ আয়ের খাতে বেশি পরিমাণ অর্থ দেওয়া হচ্ছে, হোক। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের হিসেব-নিকেশ হোক আলাদা ভাবে। মমতার অভিযোগ, একতরফা ভাবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নকশা বদলে ফেলছে কেন্দ্র। এর ফলে চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশের ফলে যদি কোনও লাভ হয়েও থাকে, সেই লাভ আখেরে ধুয়েমুছে যাচ্ছে। এর ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গরিব মানুষ।

Advertisement

কেন এই কথা বলছেন মমতা?

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ইউপিএ সরকারের আমলেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা ১৪৭ থেকে কমিয়ে ৬৬ করা দেওয়া হয়েছিল। এর পর মোদী জমানায় আরও কিছু প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন ৫৫টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু রয়েছে। রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করেই কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, অন্য প্রকল্পগুলির দায় তারা আর নেবে না। রাজ্য চাইলে নিজেদের খরচে এই সব প্রকল্প চালাবে। অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল (বিআরজিএফ), পুলিশের আধুনিকীকরণ, মডেল স্কুলের মতো প্রকল্পের দায় এখন পুরোপুরি রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, কৃষি বিকাশ যোজনা, আইসিডিএস-এর মতো প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কমানো হয়েছে। বিআরজিএফ-এর টাকায় রাজ্যের ১১টি অনগ্রসর জেলায় উন্নয়নের কাজ হচ্ছিল। মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলি এবং উত্তরবঙ্গেও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় কাজ হচ্ছিল। এখন হঠাৎ সেই সব প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। মমতার বক্তব্য, বিআরজিএফ খাতে ইউপিএ আমলে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৮৭৫০ কোটি বরাদ্দ হয়েছিল। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত তার মধ্যে ৫৫৮২ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যদিও রাজ্য তার থেকে বেশি টাকার কাজই সেরে ফেলেছে বলে মমতার দাবি।

বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও রাজ্যের দেনার বোঝা কমাতে মোদী সরকার কোনও সাহায্য করেনি বলে অনুযোগ করেছেন মমতা। তাঁর যুক্তি, বাম আমলের ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ঋণের বোঝা রাজ্যের মাথায় চেপে রয়েছে। এখন যা বাড়তে বাড়তে প্রায় পৌনে তিন লক্ষ কোটিতে পৌঁছেছে। এর পরে রাজ্যের পক্ষে আর উন্নয়ন প্রকল্পের দায় নেওয়া সম্ভব নয়। নীতি আয়োগের কমিটির কাছে পশ্চিমবঙ্গের সমস্যা নিয়ে যাবতীয় উদ্বেগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।

কেন্দ্রের অবশ্য যুক্তি, তারা প্রথম থেকেই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছে। কিন্তু মমতাই মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত নীতি আয়োগের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে যোগ দেননি। কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে রূপরেখা তৈরি করতেও মুখ্যমন্ত্রীদের উপ-কমিটি গঠন হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নেতৃত্বে ওই কমিটিই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রের দায়ভার কমানোর সুপারিশ করেছে। বস্তুত, বিবেক দেবরায়ের মতো নীতি আয়োগের সদস্যেরা প্রথম থেকেই চেয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও নীতি আয়োগের কমিটিতে থাকুন। মমতাকে স্বচ্ছ ভারত অভিযান সংক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রীদের উপ-কমিটিতে রাখাও হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনও বৈঠকেই যোগ দেননি।

এ প্রসঙ্গে মমতার পাল্টা যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বা রাজ্যের জন্য যোজনা বরাদ্দ নিয়ে কোনও কমিটি
গড়েনি কেন্দ্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা ও কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো নিয়ে নীতীশ কুমার, অরবিন্দ কেজরীবাল, তরুণ গগৈদের সঙ্গে কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। নীতীশের শপথের ফাঁকে অতিথি অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বিষয়টি তুলবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সংসদের আসন্ন অধিবেশনেও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে আলোচনা চেয়েছে তৃণমূল। এক সময়ে শোনা গিয়েছিল, কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন ডেকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হবেন মমতা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ের তরফে বলা হয়েছে, এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement