অভিষেক-তোপে কংগ্রেস
Sonia Ganhdi

Mamata Banerjee: কংগ্রেসকে নিয়েই চান বিজেপি-বিরোধী জোট, সনিয়াকে বার্তা তৃণমূলনেত্রী মমতার

কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী জোটে যাওয়ার প্রশ্নে তৃণমূল বেশ কিছু দিন ধরেই বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৩৮
Share:

ফাইল চিত্র।

কংগ্রেসকে নিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোট করতে নতুন বছরে ফের সক্রিয় হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিষয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীকে বার্তাও পাঠিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। অন্য দিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিমত, ‘‘কংগ্রেসকে একটি ভোট মানে বিজেপিকে একটি ভোট।’’

Advertisement

কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধী জোটে যাওয়ার প্রশ্নে তৃণমূল বেশ কিছু দিন ধরেই বিরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছে। দলের মুখপত্রে কংগ্রেসকে ‘বিজেপির দালাল’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। দিল্লিতে কংগ্রেসের উদ্যোগে বিরোধীদের একাধিক কর্মসূচি থেকেও তৃণমূল ‘দূরত্ব’ বজায় রেখেছে। তাদের এই ভূমিকা বিরোধী জোটের ‘পরিপন্থী’ হয়ে উঠছে কি না, এবং বিজেপি তার ‘সুবিধা’ পাবে কি না, রাজনৈতিক মহলে সেই চর্চাও যথেষ্ট জোরদার।

কিন্তু নতুন বছরে বিষয়টিতে তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রা যোগ করতে চেয়েছেন খোদ মমতাই। সনিয়াকে পাঠানো বার্তায় তৃণমূলনেত্রী যা বলেছেন, তাতে তাঁর ‘সদিচ্ছা’ অনেকটাই প্রতিফলিত। যদিও সূত্রের খবর, এখন আর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তেমন ইতিবাচক সাড়া মিলছে না। বৃহস্পতিবার গোয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিষেকও অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূল এগিয়ে গেলেও, গোয়ায় আসন সমঝোতার বিষয়ে কংগ্রেস আগ্রহ দেখায়নি।’’

Advertisement

এ দিকে তৃণমূল সূত্রে খবর, কয়েক দিন আগে সনিয়াকে মোবাইল ফোনে পাঠানো বার্তায় মমতা রাজ্যে ২০২১ সালের ভোটের সময়ে দুই দলের সম্পর্কের অবনতির প্রসঙ্গটিও তোলেন। বার্তায় লেখা হয়, সনিয়াকে‘২০২১-এর কিছু ঘটনা সত্ত্বেও এখন নতুন বছরে আবার নতুন করে এগোনো যেতে পারে। বিজেপিকে ২০২৪-এর ভোটে সম্মিলিত ভাবে হারানোর জন্য প্রয়োজনীয় রণকৌশল তৈরি করার সময় এখনই।’ সনিয়াকে মমতার প্রস্তাব, ‘বিষয়টি এগিয়ে নিয়ে যেতে কংগ্রেস এবং তৃণমূল উভয় দলের দু’জন করে প্রতিনিধি প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার কাজ শুরু করতে পারেন। সময় মূল্যবান, তাই আর দেরি না করাই ভাল।’

সনিয়ার তরফে জবাব এসেছে। যত দূর জানা গিয়েছে, তাতে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনই নতুন করে কংগ্রেস এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবে না। কংগ্রেসের এই মনোভাব অবশ্য ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। রাহুল গান্ধী যে তৃণমূলকে নিয়ে চলতে আগ্রহী নন, সেই ইঙ্গিতও মিলেছে।

গোয়ার নির্বাচনে গোমন্তক পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করছে তৃণমূল। অভিষেক এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল ৩১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আর গোমন্তক পার্টি লড়বে ন’টি আসনে।’’ কংগ্রেস যে তৃণমূলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে কোনও আগ্রহ দেখায়নি, সে কথাও প্রকাশ্যেই বলেছেন অভিষেক। যার অর্থ, কংগ্রেস এখন তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চাইছে।

এই প্রেক্ষিতে গোয়ায় শরদ পওয়ারের এনসিপির সঙ্গেও আসন ভাগ করে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মমতা। দিন দুয়েক আগে পওয়ারের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। পরে প্রফুল্ল পটেল ফোন করেছিলেন তৃণমূলনেত্রীকে। তবে বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে, এখনও তা স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে গোয়ার ভোটে শিবসেনা এবং পওয়ারের দলের আসন ভাগাভাগি হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত খবর, ওই দুই দল পারস্পরিক বোঝাপড়া করে ১০-১২টি করে আসনে প্রার্থী দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও গোটা কুড়ি
আসন বাইরে থাকবে। এবং সেগুলিতেও প্রার্থী থাকবে তৃণমূলের। ফলে বিষয়টি দেখার।

কংগ্রেস যে তৃণমূলের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি, সে কথা জানিয়ে এ দিন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দিকে আঙুল তোলেন অভিষেক। তাঁর উদ্দেশে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনি বলেছেন, আমরা (তৃণমূল) জোট করতে এগোইনি। ডিসেম্বরেই তৃণমূলের সহ সভাপতি পবন বর্মা আপনার বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তার পরেও কংগ্রেস সাড়া দেয়নি। বরং বিজেপিকে তারা একক ভাবে হারাতে পারে বলে দম্ভের কথা বলেছে।’’ পবনেরও বক্তব্য, ‘‘চিদম্বরমের মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতা, যিনি দেশের অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর বিভ্রান্তিকর আচরণে আমি হতাশ এবং বিস্মিত। তাঁর মন্তব্য সত্যের থেকে অনেক দূরে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘২৪ ডিসেম্বর চিদম্বরমের সরকারি বাসভবনে গিয়ে বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আমি নিজে কংগ্রেস এবং তৃণমূলের বোঝাপড়া নিয়ে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’’

গোয়ার গত বিধানসভা ভোটের ফলের প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক আরও বলেন, ‘‘১৭ টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। অথচ কারও-কারও স্বার্থে সরকার গড়ার দাবি পর্যন্ত জানাতে পারেনি তারা।’’ অভিষেকের এই সাংবাদিক বৈঠকের পরেই তাঁকে আক্রমণ করেছে রাজ্য কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘তৃণমূলের অবস্থা গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো।’’ বিজেপি-বিরোধী ভোট বিভাজনের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘‘গোয়ায় তৃণমূল নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশ মেনে কাজ করছে।’’ তৃণমূলকে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এ রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা সামলাতে ব্যস্ত। গোয়ার ভ্রমণকাব্য নিয়ে ব্যস্ত নই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement