ফাইল চিত্র।
মাওবাদী সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে নিয়ে বৈঠক ডাকল কেন্দ্রীয় সরকার। সূত্রের খবর, ২৬ সেপ্টেম্বর সেই বৈঠক করবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মাওবাদী সমস্যা থাকা রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদেরও দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে প্রস্তাবিত ওই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
একটি সূত্রের বক্তব্য, ৩০ সেপ্টেম্বর ভবানীপুরে নির্বাচনের ক্ষেত্রে ২৬ তারিখই প্রচারের অন্তিম পর্ব। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রচার শেষ। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লি যেতে হলে প্রচারের শেষ লগ্নে তাঁর এক-দু’দিন সময় নষ্ট হবে। তিনি তা করতে রাজি নন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে উপস্থিত হলে তাঁকে সরাসরি অমিত শাহের মুখোমুখি হতে হবে। সেখানে আলোচ্য বিষয়ের পাশাপাশি বড় হবে পারস্পরিক সাক্ষাৎ এবং প্রয়োজনীয় সৌজন্য বিনিময়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোটের কারণে মমতা যদি না যান, তা হলে সেই সম্ভাব্য পরিস্থিতিও এড়ানো যেতে পারে। বস্তুত, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই মমতার আক্রমণের নিশানায় রয়েছেন অমিত। ভোটের প্রচারেও তাঁকেই মূলত নিশানা করছেন মমতা। এই অবস্থায় দিল্লির বৈঠকে না গেলে শাহের মুখোমুখি হওয়ার পরিস্থিতিও এড়ানো যাবে।
তবে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, মাও-সমস্যা আগের মতো এখন অতটা প্রবল না থাকলেও মাঝেমধ্যেই নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানানও দিচ্ছে মাওবাদীরা। কেন্দ্র এই সমস্যা চিরতরে দূর করার জন্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর সংশ্লিষ্ট সব রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রশাসনের দাবি, আগে রাজ্যের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বীরভূমের একাংশ অতি-উপদ্রুত মাও-এলাকা বলে পরিচিত থাকলেও, তৃণমূল সরকার আসার পরে সমস্যা ক্রমশ কমতে থাকে। দীর্ঘ বেশ কয়েকবছর কোনও ঘটনা না ঘটায় এই এলাকাগুলি কেন্দ্রের অতি-উপদ্রুত মাওবাদী এলাকার তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। তবে শুধুমাত্র ঝাড়গ্রাম জেলাই কেন্দ্রের ‘সিকিওরিটি রিলেটেড এক্সপেন্ডিচার’ বা এসআরই তালিকাভুক্ত থেকে গিয়েছে। সেই কারণেই সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গকেও বৈঠকে ডাকা হয়েছে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী না গেলে রাজ্য প্রতিনিধি মনোনীত করে পাঠাতে পারে। অতীতে কেন্দ্রের ডাকা মাও-বৈঠকে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবই প্রতিনিধিত্ব করতেন। সেই দিক থেকে এ বারও স্বরাষ্ট্রসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকাকে বৈঠকে থাকার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে বলে নবান্ন সূত্রের ধারণা। তা ছাড়া পুলিশ সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য বৈঠকে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবীয়র উপস্থিতিও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কেন্দ্রের মাও-তালিকা থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর বাদ গেলেও সেই জেলাগুলির নিরাপত্তায় বাড়তি নজর রাখেন রাজ্যের ডিজি।
তবে প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের বক্তব্য, জঙ্গল এলাকায় বসবাসকারী আদিবাসীদের জমির অধিকার দেওয়ার ব্যাপারে অনেক দিন থেকেই বলে আসছে কেন্দ্র। কিন্তু এই প্রশ্নে সব রাজ্যের অগ্রগতি সমান নয়। তাই তাঁদের ধারণা, আসন্ন বৈঠকে এই বিষয়টির উপরেও গুরুত্ব দিতে পারে কেন্দ্র।