সৌজন্য: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ভুবনেশ্বরে। ছবি: পিটিআই
দেশে যাতে শান্তি বজায় থাকে, অবিলম্বে তা দেখুন— কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে আজ সরাসরি বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পূর্বাঞ্চলীয় আন্তঃরাজ্য পরিষদ (ইস্টার্ন জ়োনাল কাউন্সিল)-এর বৈঠকে স্বাভাবিক ভাবেই দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে আলোচনার কোনও সুযোগ ছিল না। সেখানে উপস্থিত ওড়িশা ও বিহারের দুই মুখ্যমন্ত্রী এবং ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রী এ প্রসঙ্গ তোলেনওনি। কিন্তু বৈঠকের শুরুতেই দিল্লি নিয়ে সরব হয়ে মমতা বলেন, ‘‘বিষয়বস্তুর বাইরে গিয়ে এই কথা বলার জন্য আমি মার্জনা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু দিল্লিতে যা ঘটছে, তা অনভিপ্রেত। সে-কথা আমাকে বলতেই হবে।’’
শাহ অবশ্য মমতার কথা শুনে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। মমতা পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ওঁর কর্মসূচি অনুযায়ী উনি বৈঠক করেছেন। ঘোষিত বিষয়ের বাইরে যাননি। দিল্লির আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কিছু বলেননি।’’
সাংবাদিকেরাও আজ শাহের নাগাল পাননি। বৈঠক চলাকালীন কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ‘নিরাপদ’ দূরত্বে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিল তাঁদের।
দিল্লিতে হিংসার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এবং শান্তির আবেদন করে কয়েক দিন ধরে বার্তা দিচ্ছেন মমতা। ভুবনেশ্বরে শাহের মুখোমুখি হয়ে তিনি যে তাঁর ক্ষোভ, উদ্বেগ ও বেদনার কথা জানাবেন, তারও আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক ‘সুসম্পর্কের’ কারণে তাঁরা শাহকে হয়তো কিছু বলবেন না, তেমন আঁচ করে মমতা নিজেই বৈঠকের শুরুতে প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি অবশ্য এ নিয়ে একাই কথা বলেছেন। বাকিরা ছিলেন শ্রোতা। মমতা বলেন, ‘‘দেশের কোনও এক প্রান্তে সমস্যা হলে তার প্রভাব সব দিকে পড়ে। সেই কারণে এমন ঘটনা অনভিপ্রেত। বিষয়টি অবিলম্বে গুরুত্ব দিয়ে দেখুন, যাতে দেশে শান্তি বজায় থাকে।’’
বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের রাজধর্ম পালন করা উচিত বলেও ইঙ্গিত করেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিতে যে-ঘটনা ঘটছে, তার জন্য আমি বিচলিত, উদ্বিগ্ন, দুঃখিত এবং মর্মাহত। শান্তি ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। আক্রান্তদের পরিবারও খুব অসহায়। তাদের সহযোগিতা করা উচিত। এক জন পুলিশ কনস্টেবল এবং আইবি অফিসারও মারা গিয়েছেন। সাধারণ মানুষ, যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গেও সহযোগিতা করা উচিত।’’
দিল্লি-কাণ্ডের পরে বিরোধী দলগুলি যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ইস্তফার দাবি করছে, তখন প্রতিক্রিয়া জানাতে মমতা অবশ্য যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আপনারা যা জিজ্ঞাসা করছেন, আমি সব কিছুর জবাব দেব না। আমার যা বলার আমি তা বলব। আগে সমস্যার সমাধান হোক। তার পরে রাজনৈতিক ভাবে আলোচনা করব।’’ পরে তিনি বলেন, ‘‘সিএএ, এনপিআর বা এনআরসি নিয়ে কোনও কথা হয়নি। কেউ এই বিষয়টি উত্থাপন করেননি। ফলে আমরাও তা করিনি।’’