ফাইল চিত্র।
ফিরহাদ হাকিম-সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের গ্রেফতারির পরে তিনি সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন ঠিকই, তবে তা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নয়। কিছু অভিযুক্ত ও তাঁদের পরিবারের পরিচিত হিসেবেই তিনি গিয়েছিলেন বলে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ-ও জানালেন, তিনি কলকাতায় সিবিআই দফতরের বাইরে ধর্নায় বসেননি। সিবিআই ‘মিথ্যে অভিযোগ’ তুলছে।
নারদ-কাণ্ডে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মামলার মঙ্গলবারই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসুর বেঞ্চে মামলা উঠলে বিচারপতি বসু শুনানি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। গত সপ্তাহে বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের মামলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি ও বিচারপতি বসু—দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। আগে কলকাতা হাই কোর্টে কাজ করেছেন। বিচারপতি বসু নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায়, বিচারপতি বিনীত সরন ও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরীর বেঞ্চে মামলা যায়। কিন্তু বিচারপতি সরন জানান, তাঁদের পক্ষে মামলার নথি না দেখে সওয়াল-জবাব শোনা সম্ভব নয়। শুক্রবার শুনানি হবে। তত দিন কলকাতা হাই কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি স্থগিত রাখা হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে শীর্ষ আদালত।
ফিরহাদ, সুব্রত, মদন মিত্র ও শোভন চট্টোপাধ্যায়দের গ্রেফতারের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক সিবিআই দফতরে হাজির হয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থার কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে সিবিআই কলকাতা হাই কোর্টে অভিযোগ তুলেছে। মলয় জামিনের আবেদনের সময় আদালতে হাজির থেকে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিলেন বলেও সিবিআইয়ের নালিশ। সিবিআই তাঁদের নাম জড়ালেও কলকাতা হাই কোর্ট মমতা, মলয় বা রাজ্য সরকারের পাল্টা জবাবি হলফনামা গ্রহণ করতে রাজি হয়নি।
হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধেই প্রথমে রাজ্য সরকার ও আইনমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে এসেছিলেন। দাবি ছিল, হাই কোর্টকে তাঁদের বক্তব্য গ্রহণ করতে বলা হোক। এর পর মমতা নিজেও আলাদা ভাবে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মমতা তাঁর পিটিশনে জানিয়েছেন, সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর মিথ্যে অভিযোগ তুলে কোর্টকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে। তিনি তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়কদের গ্রেফতারির পরে সিবিআই দফতরে গেলেও সেখানে ধর্নায় বসেননি। এ-ও জানান, সিবিআই দফতর ঘেরাও করারও প্রমাণ নেই, জোর করেও তিনি সিবিআই দফতরে ঢোকেননি। বাকি সকলের মতো আধাসেনার ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় পেরিয়েই সিবিআই দফতরে গিয়েছিলেন এবং যত ক্ষণ ছিলেন, সিবিআই অফিসারদের নির্দেশ\মেনেই চলেছেন বলেই মমতা পিটিশনে জানান।
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের অভিযোগ, হাই কোর্ট সিবিআই অভিযোগের উল্টো দিকের বক্তব্য গ্রহণ করতে রাজি নয়। বলা হচ্ছে, দেরিতে হলফনামা জমা করার চেষ্টা হচ্ছে। রাজ্যের আইনজীবী বিকাশ সিংহ বলেন, ‘‘আমরা তো ২৪ মে শুনানির শুরুতে মামলার শরিকই ছিলাম না। ২৭ মে শরিক করা হয়। ৭ জুন হলফনামা জমা দেওয়া হয়। হাই কোর্ট তা নিতে রাজি হয়।’’ সুপ্রিম কোর্ট ইঙ্গিত দিয়েছে, শুক্রবারই এ বিষয়ে শুনানি শেষ করে ফেলার চেষ্টা হবে।
রাজ্য বা কলকাতা হাই কোর্ট থেকে আসা একের পর এক সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পশ্চিমবঙ্গের মামলা থেকে কেন নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছেন, তা নিয়ে আইনজীবী মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। কারণ বিচারপতিরা নিজেদের রাজ্যের মামলা শোনেন না, এমন নয়। বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন নন্দীগ্রামে মমতার নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের মামলা শুনেছিলেন।