প্রধানমন্ত্রীর ‘দাবিপূরণ’-এর প্রথম বলি হলেন মহারাষ্ট্রের রাজস্বমন্ত্রী একনাথ খডসে।
দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন দিতে প্রধানমন্ত্রী গোড়া থেকেই বলে আসছিলেন, ‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ (না খাব, না খেতে দেব)। গত দু’বছরে বিরোধীরা বিজেপির কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেনি এমন নয়। খোদ নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও গুজরাতের গ্যাস কেলেঙ্কারি নিয়ে সরব কংগ্রেস। কিন্তু এই প্রথম প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত রেখে মোদীর ভাবমূর্তি অটুট রাখতে মন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিতে হল একনাথ খডসেকে। আজ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসের সঙ্গে দেখা করে ইস্তফা দেন তিনি।
খডসের বিরুদ্ধে জোড়া অভিযোগ ছিল। ক’দিন আগে আম আদমি পার্টির তরফে অভিযোগ তোলা হয়, খডসের টেলিফোনে কথা হয়েছে পাকিস্তানে থাকা দাউদ ইব্রাহিমের। মহারাষ্ট্রের সন্ত্রাস-বিরোধী স্কোয়াড তদন্ত করে অবশ্য খডসেকে সে যাত্রায় ক্লিনচিট দিয়েছিল। কিন্তু তার ক’দিনের মাথায় যখন দুর্নীতির অভিযোগ উঠল, তখন তার ঝড় আছড়ে পড়ে দিল্লিতেও। রাজস্ব মন্ত্রীর পদের অপব্যবহার করে নিজের স্ত্রী ও জামাইয়ের নামে একটি সরকারি জমি সস্তায় কেনার অভিযোগ ওঠে খডসের বিরুদ্ধে। ৩০ কোটি টাকার সেই সরকারি জমি মাত্র চার কোটি টাকায় কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে বিরোধীরা। আর তার পরেই অভিযোগের আঙুল ওঠে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দিকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের দু’বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী থেকে গোটা বিজেপি শিবির সাফল্যের তালিকার শীর্ষে রেখেছে দুর্নীতিমুক্ত সরকার দেওয়াকেই। তার মধ্যেই বিজেপি শাসিত রাজ্যে এমন একটি দুর্নীতির অভিযোগে নড়েচড়ে বসেন প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসের সঙ্গে দেখা করেন উভয়েই। তাঁর কাছে রিপোর্টও চাওয়া হয়। সে সব খতিয়ে দেখার পরেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খডসেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আর কোনও গতি নেই। গতকাল নিতিন গডকড়ীকে দিয়ে সেই বার্তা দেওয়া হয় খডসেকে।
এর আগে মহারাষ্ট্রেই প্রয়াত গোপীনাথ মুণ্ডের কন্যা পঙ্কজার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সে অভিযোগ ধোপে টেকেনি। বিরোধীরা ললিত মোদী কাণ্ডে সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংসদ অচল রেখেছিল। মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কাণ্ড নিয়েও উত্তাল হয় সংসদ। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তা মোকাবিলা করতে সমর্থ হয়েছিল বিজেপি। সুষমার বিরুদ্ধে সেই অর্থে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল না। আর বাকিগুলিও মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর হয়নি। তবে বিজেপি নেতারাই এ বারে মানছেন, সাদা চোখেই খডসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে তাঁকে সরানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। তাই সম্মানজনক বিদায় হিসেবে তাঁকেই ইস্তফা দিতে বলা হয়।
তবে ইস্তফার পরেও যাতে খডসে তাঁর সমর্থকদের নিয়ে দলকে বিপাকে ফেলতে না পারেন, তার জন্য এখনও রাজনৈতিক ভাবে প্রশমিত করানোর চেষ্টা চলছে। খডসের সমর্থনে বেশ কিছু বিধায়ক রয়েছেন। তাঁর জনভিত্তিও আছে। তাঁরা যাতে বিদ্রোহী না হন, সেই চেষ্টাই করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই আজ ইস্তফা দেওয়ার পর খডসের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। সে সম্মেলনে খডসে অবশ্য দাবি করেন, তিনি কোনও ভুল করেননি। অচিরেই সেটি প্রমাণ হয়ে যাবে। সংবাদমাধ্যমের উপরেই বরং নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মন্ত্রী।