অজিত পওয়ারের (বাঁ দিকে) সঙ্গে কথা সঞ্জয় রাউতের। —ফাইল চিত্র
দৌড়চ্ছে সময়। হাতে আর মাত্র ৬ দিন। তার মধ্যে সরকার গঠন করতেই হবে। অথচ এখনও মুখ্যমন্ত্রী ইস্যুতে সমঝোতায় আসা দূর অস্ত, আলোচনাই শুরু করতে পারল না শিব সেনা-বিজেপি। ৫০-৫০ ফর্মুলায় অনড় সেনা। রবিবারও দলের নেতারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাঁদের ফর্মুলা না মানলে বিকল্প পথে সরকার গঠনের চেষ্টা করবে সেনা। কিন্তু বিজেপি তাতে রাজি নয়। তার মধ্যে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের ভাইপো তথা এনসিপি নেতা অজিত পওয়ার দাবি করেছেন, সঞ্জয় রাউত তাঁকে মেসেজ করার পর তিনি তাঁকে ফোন করে কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে রাজনৈতিক টানাপড়েন চরমে।
মহারাষ্ট্রের কুর্সির বাইরে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে, তা হল অকাল বর্ষণে কৃষকদের ক্ষতি। তা নিয়েও অবশ্য ভোটের আগে জোট করে লড়াই করা দুই শরিকের মধ্যে সঙ্ঘাত স্পষ্ট। প্রায় প্রতি দিনই ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে আলাদা করে কৃষকদের সঙ্গে দেখা করছেন বিজেপি ও শিবসেনা নেতারা। সরকারের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের কটাক্ষ, এই সামান্য টাকায় কিছুই হবে না।
কিন্তু আসল বিষয় সরকার গঠনের ছবিটাই এখনও স্পষ্ট নয়। বিজেপি সূত্রে খবর, দলের নেতৃত্ব চাইছেন শিবসেনাকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক পদ দিয়ে সমঝোতার রাস্তা খুলতে। কিন্তু শিবসেনা নেতৃত্ব রবিবারও জানিয়ে দিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোনও ইস্যুতে আলোচনা হবে না। শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে রবিবারও বলেছেন, ‘‘কয়েক দিনের মধ্যেই জানা যাবে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতায় শিবসেনা থাকবে কী থাকবে না।’’ অন্য দিকে এ দিন আকোলায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘খুব শীঘ্রই সঙ্কট কেটে যাবে এবং নতুন সরকার গঠন হবে।’’
আরও পড়ুন: এনআরসি বর্তমানের নথি নয়, ভবিষ্যতের ভিত্তি, বললেন প্রধান বিচারপতি
কিন্তু কবে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছে। অথচ হাতে সময় মাত্র ৬ দিন। কারণ বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৯ নভেম্বর। তার মধ্যেই সরকার গঠন করতে হবে। ২৪ অক্টোবর ফল ঘোষণার ১০ দিন পরেও কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছতে পারেনি বিজেপি-শিবসেনা। আবার এনসিপির সঙ্গে জোট গড়ার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে সেনা নেতৃত্ব। আজই দলের মুখপত্র ‘সামনা’য় দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বিজেপি ৫০:৫০ ফর্মুলা না মানলে বিকল্প খুঁজবে শিবসেনা। সকালেই আবার শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন অজিত পওয়ার। তিনি বলেন, ফল ঘোষণার পর এই প্রথম উনি (সঞ্জয়) আমাকে মেসেজ করলেন। একটু পরেই ফোন করে আমি কথা বলব।’’
মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ১০৫টি আসন। শিবসেনার দখলে ৫৬টি। ভোটের আগেই জোট হয়েছিল দু’দলের। শরদ পওয়ারের এনসিপির দখলে ৫৪টি এবং কংগ্রেসের হাতে ৪৪ আসন রয়েছে। অর্থাৎ ২৮৮ আসনের মহারাষ্ট্র বিধানসভায় বিজেপি-শিবসেনার মোট আসন ম্যাজিক ফিগারের চেয়ে বেশি হলেও সঙ্ঘাতের জেরে সরকার গঠনের কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। অন্য দিকে ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে এও বলা হয়েছে, এনসিপির ৫৪ এবং কংগ্রেসের ৪৪ আসন এবং কয়েক জন নির্দলকে নিয়ে শিবসেনা প্রয়োজনীয় সংখ্যা পেতেই পারে। প্রতিবেদনে দলের নেতাদের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে। তার জন্য তিন দলেরই আদর্শ ও ভাবধারার সঙ্গে মানানসই নীতি তৈরি করতে হবে।’’
আরও পডু়ন: সাড়ে পাঁচ বছরে ব্যবসা বেড়েছে ১৫০০০ শতাংশ! অমিত-পুত্র জয়ের বিরুদ্ধে তোপ কংগ্রেসের
অর্থাৎ গাণিতিক সমীকরণ অনেক রয়েছে, উঁকি দিচ্ছে একাধিক রাজনৈতিক সম্ভাবনা। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে তার চেয়েও বেশি ভাসছে নানা জল্পনা। কিন্তু মূল সঙ্কট, সরকার গঠনের কোনও সমাধান সূত্রই এখনও পর্যন্ত বের করতে পারেনি কোনও রাজনৈতিক দল।