যোগীকে কালো পতাকা দেখিয়ে ভিটেছাড়া পূজা!

সমাজবাদী পার্টির এই ছাত্র-নেত্রী এখন যোগী আদিত্যনাথ সরকারের চক্ষুশূল এবং আতঙ্ক। ২৩ বছর বয়সেই ২৬ দিন জেল খেটে জামিন পেয়েছেন। অপরাধ, গত বছর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথকে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো পতাকা দেখানো।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৮
Share:

প্রতিবাদী: পুলিশের ভ্যানে তোলা হচ্ছে পূজাকে। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ি বেচে অন্য পাড়ায় চলে আসতে হয়েছে। এত বার বাড়িতে পুলিশ আসত যে পাড়ার লোকেরা বিরক্ত হতেন। তাতেও নিস্তার নেই। পুলিশ নতুন বাড়িতে এসে বাবাকে বলছে, মেয়েকে বোঝান। কোন দিন কী বিপদ হবে, কে বলতে পারে!

Advertisement

লখনউ থেকে উত্তেজিত গলায় ফোনে বলছিলেন পূজা শুক্ল।

সমাজবাদী পার্টির এই ছাত্র-নেত্রী এখন যোগী আদিত্যনাথ সরকারের চক্ষুশূল এবং আতঙ্ক। ২৩ বছর বয়সেই ২৬ দিন জেল খেটে জামিন পেয়েছেন। অপরাধ, গত বছর উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথকে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে কালো পতাকা দেখানো।

Advertisement

পূজার সেই কালো পতাকাতেই এখন জুজু দেখছে যোগীর পুলিশ। সমাজবাদী পার্টি নেতৃত্বের অভিযোগ, তাদের ছাত্র নেতানেত্রীদের আক্ষরিক অর্থেই ভিটেমাটি ছাড়া করতে উঠেপড়ে লেগেছে পুলিশ। নরেন্দ্র মোদী বা অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে গেলেই ছাত্র নেতানেত্রীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে পুলিশ। হয় তুলে নিয়ে যাচ্ছে, না হলে বাড়ির বাইরেই পাহারায় বসে থাকছে।

গত ২৮ জুলাই তাঁর সঙ্গে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল বলে পূজার অভিযোগ। ওই দিনই দু’দিনের সফরে লখনউ যান মোদী। পূজা বলেন, ‘‘সকালে বন্ধুর বাড়ি থেকে বার হতেই তিনটি পুলিশের জিপ এসে আমাকে তুলে নেয়। বোধহয় মোবাইলে আড়ি পেতে কোথায় আছি তা জেনে নিয়েছিল। সারাদিন পুলিশের গাড়িতে করে লখনউয়ের নানা রাস্তায় আমাকে ঘোরানো হয়। সেই সঙ্গে গালিগালাজ। এনকাউন্টারের হুমকি। বাড়িতে ফোনও করতে দেয়নি। বন্ধুরা আমাকে ফোন করলে মহিলা কনস্টেবল বলেছে, ‘আমি পূজার মা বলছি। ও ঠিক আছে।’ রাত ন’টার পরে পুলিশ ছেড়ে দেয়।’’

আরও পড়ুন: দেশকে রক্ষা করেও বিদেশি! অপমানিত সেনা

পরের দিনও লখনউয়ে ছিলেন মোদী। পূজা বলেন, ‘‘সেদিনও বাড়ির বাইরে সর্বক্ষণ পুলিশ বসেছিল। বার হইনি। কিন্তু পুলিশ বাবাকে ভয় দেখিয়েছে। বলেছে, মেয়েকে বোঝান।’’ যোগীকে কালো পতাকা দেখানোর জন্য জেলবন্দি থাকার পরে জামিন পেলেও, তাঁকে লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তি নেওয়া হয়নি। প্রতিবাদে অনশনেও বসেন। অখিলেশ যাদবও যার সমালোচনায় সরব হয়েছেন।

পূজা-রা তিন বোন। বাবা রাকেশ শুক্লর ছোটখাটো ব্যবসা। মেয়ের খোঁজে পুলিশের হানায় বাড়ি বেচে অন্য পাড়ায় উঠে এসেছেন। নতুন বাড়িতেও রেহাই মিলছে না। সমাজবাদী ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সভাপতি দিগ্বিজয় সিংহ দেও বলেন, ‘‘একা পূজা নন। মোদী, অমিত শাহ রাজ্যে এলেই পুলিশ আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। আমি লখনউয়ে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। আমাকেও তিন বার বাড়ি বদলাতে হয়েছে।’’ গত ২৭ জুলাই ইলাহাবাদে ছাত্রীরা অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন। তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দিগ্বিজয় বলেন, ‘‘মোদীর সফরের আগের দিনই ওই ঘটনায়, পুলিশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। সে জন্যই পূজাকে প্রায় অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল।’’

পুলিশের খাতায় অবশ্য অপহরণের রেকর্ড নেই। লখনউয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোমতীপার) হরেন্দ্র কুমারের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সফরের জন্য কয়েক জন নেতানেত্রীর উপরে নজর রাখা হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু কাউকে আটক করা হয়নি।’’

কেন কালো পতাকা দেখিয়েছিলেন যোগীকে? পূজা বলেন, ‘‘বিজেপি সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা তহবিলের টাকায় সঙ্ঘের মতাদর্শ প্রচার করতে চাইছে। আমরা এর প্রতিবাদ করবই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement