এতটাও মিল হয়! হুইলচেয়ারে বন্দি নেহাল থক্কর ও অনুপ চন্দ্রনের কথা শুনলে আপনার মনে প্রথমেই এই বিষয়টা আসবে। তাঁদের বিয়েটা যেন রূপকথার। কিন্তু কী ভাবে এই বিয়ে হয়ে উঠল রূপকথার মতো?
মুম্বইয়ে চিকিৎসা করাতে এসে আলাপ তাঁদের। কিন্তু দু’জনেই হুইলচেয়ারে বন্দি হয়ে গেলেন কী ভাবে?
নবি মুম্বইয়ের রাস্তায় পথ দুর্ঘটনায় শিরদাঁড়ায় মারাত্মক চোট পান অনুপ। হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন সারা জীবনের মতো।
নেহালের ক্ষেত্রেও তাই। একই রাস্তায় একই রকম দুর্ঘটনায় একই মডেলের গাড়িতে একই তারিখে নেহালেরও দু্র্ঘটনার মুখোমুখি হন। বছরটা শুধু আলাদা। নেহালও হারিয়ে ফেলেন হাঁটাচলা করার ক্ষমতা।
অনুপের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটেছিল ২০০৩ সালের ২২ জুন, আর নেহালর ক্ষেত্রে ২০০৫ সালের ২২ জুন।
দু’জনেই ছিলেন মারুতি জেন মডেলের গাড়িতে।
চিকিৎসা করাতে এসে আলাপ হয়েছিল দু’জনের। একই জায়গায় একই রকম আঘাত পাওয়া, একই রকম জীবন কাটানোর ধরনটাই বন্ধুত্ব হওয়ার প্রধান কারণ। এর পরেই সিনেমা দেখা, কফি খাওয়া, সারা জীবনের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া, একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেন অনুপ।
অনুপ একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরত, নেহাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা চালান হুইলচেয়ারে বসেই। তাঁদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মেনেছে ভালবাসা।
প্রথম কবে বুঝলেন পরস্পরকে ভালবাসার কথা? অনুপ বলেন, নেহাল ২০ দিনের জন্য এক বার দেশের বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে নেহালকে তিনি প্রচণ্ড মিস করেছিলেন। নেহালও জানিয়েছেন একই কথা।
ফেরার পর দু’জনেই বলেন কতটা মিস করেছেন পরস্পরকে। কারণ ভালবাসা। এর পর সাত বছর চুটিয়ে প্রেম। আর তারপরই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
বাড়ির লোক প্রথমে মানতে পারেননি হুইলচেয়ারে থাকা দুটো মানুষ কী ভাবে পরস্পরের পাশে থাকবেন। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজও। অনুপ দক্ষিণ ভারতীয়। অন্য দিকে নেহাল গুজরাতি। কিন্তু তাঁরা পেরেছেন। অন্য কারও সাহায্যে তাঁদের চলাফেরা করতে হলেও মনের জোর পেয়েছেন পরস্পরের। কোনও কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
২০১৮ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন তাঁরা। সংসারও করছেন দিব্যি। বিয়ের পর গোয়াও বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা।
মেহেন্দি থেকে সঙ্গীত, বিয়ের সবকটি রীতিনীতি মেনেই গাঁটছড়া বেঁধেছেন এই দম্পতি।
এমনকী বরপক্ষ ও কনেপক্ষের প্রত্যেকের সঙ্গে হুইলচেয়ারে বসে দিব্যি নাচের ছন্দে মেতেছেন দু’জনে। বাকি জীবনটাও এমন আনন্দেই কাটাতে চান তাঁরা। (প্রতিটি ছবি ৩৬০ ডিগ্রির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া)