প্রতীকী ছবি।
পোলিং অফিসাররা ভোটার তালিকায় নাম-নম্বর মিলিয়ে দেখছেন। ঘরের এক কোণে ভোট দেওয়ার জন্য পিচবোর্ড ঘেরা ইভিএম কক্ষ। লাইন পড়েছে ভোটারদের। সেই লাইনে ছিলেন কাছাড় জেলার লক্ষ্মীপুরের নিকোলা মার। ইভিএমে পছন্দের চিহ্ন না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। এ যে আসলে ভোট নয়, স্রেফ ভোটের মহড়া তা তাঁকে বোঝানো গেল না। কিছুতেই বোতাম টিপতে রাজি হলেন না নিকোলা।
ও দিকে, কাটিগড়ার প্রভাতী সূত্রধর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বুথে ঢুকেই জানতে চাইলেন, ‘‘আজ আবার কীসের ভোট!’’ সব জেনে তাঁর সোজা কথা, ‘‘ভোট-ভোট খেলায় আমি নেই। শেষে ভোটের দিন বলবেন, তোমার ভোট আগেই হয়ে গিয়েছে!’’ ইভিএমের সামনে যেতেই রাজি হলেন না তিনি।
নিকোলা মার, প্রভাতী সূত্রধরদের মতো আপত্তি তোলেননি রুবি বড়ভুইয়া। কিন্তু ভোটের পর যখন ভিভিপ্যাট মেশিনে নিজের দেওয়া ভোটটি দেখতে পেলেন, ঘাবড়ে গেলেন তিনি। বার বার জানতে চাইলেন, এ বার কি তাহলে ভোট দিলে সবাই দেখে নেবে? ভিভিপ্যাটে যে শুধুই ভোটার তাঁর ভোটটি ঠিক জায়গায় পড়ল কিনা, তা দেখতে পারবেন, অন্য কেউ নয়, অনেক বুঝিয়ে বলার পর শান্ত হলেন তিনি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের মহড়া দিতে গিয়ে এ বার বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রশিক্ষকরাও। ইভিএম-এ গিয়ে কেউ খুঁজছেন পদ্মফুল, কেউ হাতচিহ্ন। অনেকে আবার নোটা-রও খবর নিচ্ছেন। তবে ভিভিপ্যাট নিয়েই মানুষের বেশি কৌতূহল।
রাধামাধব কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক সুদর্শন গুপ্ত বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের ভোট সচেতনতা কতটা রয়েছে, তা বলা মুশকিল। কিন্তু চিহ্ন সচেতনতা বেশ স্পষ্ট।’’ মহড়ার জন্য ব্যবহৃত ইভিএমে পছন্দের চিহ্ন না পেয়ে অনেকেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
গুরুচরণ কলেজের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক অপ্রতীম নাগ জানান, কচুদরমে বোতাম টিপে এক মহিলা ভোটারের আক্ষেপ, তাঁর ছবি তো দেখা গেল না! শুধুই ভোটটি। জীবন বিমা নিগমের অফিসার এস বি দত্তচৌধুরীও এমন বহু ঘটনার সাক্ষী। তাঁর কথায়, অনেকে ভিভিপ্যাটে দেখানো চিহ্নযুক্ত স্লিপটি নিয়ে যেতে চাইছিলেন। সেটি ভোটের দিনও দেওয়া হবে না জেনে খানিকটা হতাশই হয়েছেন।
ভিভিপ্যাট গত ভোটে শুধু শিলচর বিধানসভা কেন্দ্রে পাইলট প্রোজেক্ট হিসেবে চালানো হয়েছিল। এ বার সর্বত্র। ফলে নিজের ভোটটি দেখতে পাওয়া যায় যে মেশিনটিতে, তার প্রতি আগ্রহ রয়েছে সব বয়সের মানুষেরই।