কমলে টান নেই, রজনী এখনও বাকি!

শ্রীপেরুমবুদুরে দলের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কমল হাসন যখন বলেছিলেন, ‘আমার প্রার্থী এন শ্রীধরকে ভোট দিন’, জনতা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

চেন্নাই শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৪৯
Share:

কমল হাসন

টিকিট কেটে সিনেমার ‘ফার্স্ট ডে-ফার্স্ট শো’ দেখতে যাওয়ার টক্করে দু’জনের ভক্তদের অবস্থাই— এ বলে আমায় দ্যাখ-ও বলে আমায় দ্যাখ। ‘হিরো’কে একবার চোখের দেখা দেখতে সব কিছু পণ করতে পারেন তাঁরা। এমনকি ‘হিরো’র অসুস্থতার খবরে গায়ে আগুন দেওয়ার চেষ্টাও ঘটেছে বহু বার। কিন্তু সেই নায়কের কথায় ভোট দেওয়া? এ যুগের তামিল জনতার কি তাতে বিশেষ মন আছে?

Advertisement

শ্রীপেরুমবুদুরে দলের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কমল হাসন যখন বলেছিলেন, ‘আমার প্রার্থী এন শ্রীধরকে ভোট দিন’, জনতা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল। কিন্তু সভা শেষের পরে ভাঙা হাটে হোটেল ব্যবসায়ী পুন্নুস্বামীকে যখন প্রশ্ন করেছিলাম, ‘‘আপনার প্রিয় নায়ক রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় খুশি তো?’’ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি তো ওঁকে দেখতে এসেছিলাম। ভোট ভোটের জায়গায়, হিরো হিরোর জায়গায়।’’

এখনই ভোটে দাঁড়াচ্ছে না তাঁর দল। জানিয়েছেন, ‘থালাইভা’ রজনীকান্ত। রাজ্যের বা দেশের নেতা হিসেবে তাঁকে দেখতে কতটা আগ্রহী আমজনতা? কলেজ পড়ুয়া অবিনাশ বললেন, ‘‘রাজ্য বা দেশ চালাতে গেলে রাজনৈতিক বোধটা জরুরি। ওঁর সেই পরিচয় আমরা এখনও পাইনি।’’

Advertisement

রজনীকান্ত

সুপারস্টার কমলের মক্কল নিধি মইয়ম (এমএনএম) লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তবে তিনি নিজে প্রার্থী হননি। রাজ্যে ৫০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমলের বক্তব্য, ‘‘সব প্রার্থীই আসলে আমার মুখ। আমাকে দেখে ভোট দিন।’’ অন্য দিকে, রজনীকান্ত তাঁর ফ্যানস অ্যাসোসিয়েশনের নাম বদলে রজনী মাক্কাল মন্দ্রম রাখলেও সেই সংগঠন এখনও ভোটের রাজনীতিতে আসেনি। সে নিয়েও দু’পক্ষের অহি-নকুল সম্পর্ক সামনে আসছে বার বার।

যেমন, কমল বলছেন, ‘কেউ কেউ ‘টেবিলে কলা পাতা রেখে বলছেন, খাব না। তা আবার হয় নাকি?’’ পাল্টা রজনীকাম্তের মন্তব্য, ‘‘সব ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কে কী বলল তাতে আমার সিদ্ধান্তে কোনও বদল হবে না।’’

ভোটের আগে বিভিন্ন জেলায় ৬৩ বছরের কমল এবং ৬৮-র রজনীকান্তের প্রসঙ্গ তুলে একটা বিষয় পরিষ্কার। তা হল, এখনও এঁদের রাজনৈতিক ভূমিকাকে ‘সিরিয়াসলি’ নিতে প্রস্তুত নন একটা বড় অংশই। অথচ সিনেমার জগত তামিল রাজনীতিকে প্রভাবিত করছে বহু বছর ধরেই। সি এম আন্নাদুরাই এবং এম করুণানিধি দুজনেই ছিলেন নামী চিত্রনাট্যকার। এম জি রামচন্দ্রন পর্দায় উপস্থিতির জেরে মানুষের হৃদয় কাঁপাতেন। এমজিআরের পছন্দের নায়িকা হিসেবে জয়ললিতার জোরদার পরিচিতি ছিল। অভিনেত্রী খুশবু কিংবা জনপ্রিয় অভিনেতা বিজয়কান্তকেও তামিল জনতা সাদরেই গ্রহণ করেছে।

কিন্তু হালে পরিস্থিতি কি একটু বদলেছে? আলওয়ারপেটে কমলের বাড়ির অদূরে ভুজিয়ার দোকান চালান যে প্রৌঢ়, তাঁর কথায়, ‘‘দিনকাল পাল্টে গিয়েছে। গিমিকে লোকজন আর ভুলছেন না। ওঁর দলে কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী করা হয়েছে? যে যত বড় ফ্যান, সে তত গুরুত্বপূর্ণ জায়গার প্রার্থী! এ রকম ভাবে চলে নাকি?’’ প্রসঙ্গত, প্রার্থী করা নিয়ে কমলের দলে ভাঙন শুরু হয়েছে।

অন্য দিকে, রজনীর জনসংযোগ গত এক বছরে কমেছে বলেই মনে করেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। ‘কালা’-র মতো রাজনৈতিক ছবি করেছেন ঠিকই, কিন্তু তুতিকোরিনে গত বছর পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারীদের মৃত্যুর পরে তাঁর বক্তব্য আমজনতার সঙ্গে দূরত্ব অনেকটাই বাড়িয়েছিল। তুতিকোরিনের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মুথুভেলের কথায়, ‘‘সিনেমার নায়কেরা সিনেমাতেই গরিবের কথা ভাবেন। বাস্তবে আমাদের পাশে কেউ থাকে না।’’ চেন্নাইয়ের পোয়েজ গার্ডেনে রজনীকান্তের প্রতিবেশীদের অনেকেই ওঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতের প্রসঙ্গ উঠলে অন্য দিকে তাকিয়ে থেকেছেন। প্রশ্ন করলে বলেছেন, ‘‘এখনই এ সব বলা যায় নাকি?’’

বস্তুত, দুই তারকাকে নিয়ে জনতার এই নিস্পৃহতা খানিক নিশ্চিন্ত করে রেখেছে ডিএমকে এবং এডিএমকে-কে। ডিএমকে-র মুখপাত্র এলানগোভান যেমন বললেন, ‘‘রজনী বুদ্ধিমান। ভোটে দাঁড়াননি। আর কমল হাসনের দল দুধ-ভাত।’’ এডিএমকে-র জয়কুমারের কথায়, ‘‘ভোটের আগে ওঁদের কথা ভেবে সময় নষ্ট করতে চাই না।’’ চেন্নাইয়ের কলেজের শিক্ষক শিবকুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘ওঁরা এখন জল মাপছেন। দুজনেই তাকিয়ে আছেন বিধানসভা ভোটের দিকে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement