লালুপ্রসাদ যাদব।—ফাইল চিত্র।
শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে জামিনের আবেদন করেছেন লালুপ্রসাদ যাদব। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিবিআই) মতামত জানতে চাইল সুপ্রিম কোর্ট। লোকসভা নির্বাচনে বাকি মাত্র এক মাস। তার আগে রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতাকে জামিন দেওয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতামত জানতে চেয়েছে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ। তার পরই পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলার শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন লালুপ্রসাদ। কিন্তু গত ১০ জানুয়ারি সেখানে তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়। যার পর সরাসরি শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন আরজেডি সুপ্রিমো। ঝাড়খণ্ড আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিশেষ লিভ পিটিশন জমা দেন। তাতে বলেন, ৭১ বছর বয়স হয়েছে তাঁর। সেই সঙ্গে শরীরে একাধিক রোগ বাসা বেঁধেছে। রাঁচীর রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে চিকিত্সা চলছে। ডায়াবেটিস, রক্তচাপ ও হৃদরোগের সমস্যার জন্য দিনে ১৩ রকমের ওষুধ খেতে হয়। পশুখাদ্য দুর্নীতির অন্য মামলায় ইতিমধ্যেই জামিন মঞ্জুর হয়েছে তাঁর। এই মামলাতেও জামিন দেওয়া হোক তাঁকে।
আদালতে লালুপ্রসাদের হয়ে সওয়াল করছিলেন কংগ্রেস নেতা তথা বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিবল। সেখানে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গও তুলে আনেন তিনি। বলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোটের অংশ রাষ্ট্রীয় জনতা দল প্রধান লালু। প্র্রার্থীদের টিকিট বণ্টনের দায়িত্ব তাঁরই। অনেক কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে তাঁকে। তাই কিছুদিনের জন্য ছুটি মঞ্জুর করা হোক।
আরও পড়ুন: জেলে বসেই সেট-এ উত্তীর্ণ প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব
তবে নির্বাচনী কাজ সামলাতে হাজতবাস থেকে লালুর সাময়িক ছুটি চাওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে ইতিমধ্যেই দুর্নীতি-সহ বিভিন্ন অপরাধ মামলায় দোষী সাব্যস্ত দাগী নেতাদের উপর নির্বাচনী নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে, যাতে কোনওভাবেই নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন তাঁরা। কোনও মামলায় ২ বছরের সাজা হলে, ওই নেতা পরবর্তী ছ’বছর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। পশুখাদ্য দুর্নীতিতে অপরাধী সাব্যস্ত লালুর ক্ষেত্রেও এই নির্দেশ প্রযোজ্য। তবে আরজেডি নেতৃত্বের দাবি, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না লালু। দলের প্রধান হিসাবে কাগজপত্রে সই করবেন শুধু। তবে তা আদৌ সম্ভব হবে কিনা, এই মুহূর্তে সিবিআই ও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের উপরই তা নির্ভর করছে।
৯০০ কোটির পশুখাদ্য দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব। অবিভক্ত বিহারের (তখনও আলাদা ঝাড়খণ্ড তৈরি হয়নি)সরকারি ট্রেজারি থেকে কোটি কোটি টাকা সরানোর অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। যার মধ্যে ২০১৩ সালে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির প্রথম মামলাটিতে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে দোষী সাব্যস্ত হন দেওঘর ট্রেজারি মামলায়। ২০১৮-র জানুয়ারিতে চাইবাসা এবং মার্চে দুমকা ট্রেজারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন লালুপ্রসাদ।
আরও পড়ুন: বাজেয়াপ্ত করা হবে মাসুদ আজহারের সম্পত্তি, ঘোষণা ফ্রান্সের
লালুর বিরুদ্ধে পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির আরও দু’টি মামলা এখনও বিচারাধীন। একটির বিচার চলছে পটনায়।অন্যটির রাঁচীতে। তবে এ সবই বিজেপির ষড়যন্ত্র বলে দাবি লালুপ্রসাদ যাদব এবং আরজেডি নেতৃত্বের।