জাতির উদ্দেশে ভাষণ। বুধবার খবরটা জেনেই দুরুদুরু দেশবাসীর। টুইটারেও ‘কী হয় কী হয়’ উৎকণ্ঠা।
সকাল ১০টা ৫৩-য় ‘চৌকিদার নরেন্দ্র মোদী’ টুইট করলেন, পৌনে ১২টা থেকে ১২টার মধ্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন। ব্যস, অনুমানের স্রোত! কেউ বললেন, ‘‘আবার নোটবন্দি নয় তো?’’ কারও অনুমান, দাউদ বা মাসুদ আজহার ধরা পড়েছেন। কারও মত, সংবিধানের ৩৭০ ধারা নিয়ে ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। টুইটার ট্রেন্ডিংয়েও ধরা পড়ল সেই অনুমানের ধারা। ট্রেন্ডিং তালিকায় ঢুকে পড়ল ‘মিত্রোঁ’, ‘দাউদ’, ‘এটিএমস্’ ও ‘আর্টিকল ৩৭০’।
অনুমানের ভার টুইটারে জমিয়ে বসল রঙ্গ-ব্যঙ্গ নিয়ে। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা টুইট করলেন, ‘‘উনি লোকসভা ভোটের ফল ঘোষণা করবেন।’’ কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর লিখলেন, ‘‘এই খবরে অনেকে এটিএমে টাকা তুলতে দৌড়ন। অনেক অসৎ লোক ব্যাঙ্কে টাকা জমা করতে যান। তাঁদের জন্য দুঃখ হয়, যাঁদের মাস শেষে জমা দেওয়া বা তোলার মতো টাকাই নেই।’’ আমজনতাই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? এক জন ইমরান খানের ছবি পোস্ট করে লিখলেন, মোদী তাঁর রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ছড়াল কার্টুন, যাতে মোদী টিভি থেকে ভিনগ্রহীদের বলছেন, ‘এলিয়েন মিত্রোঁ’! ইন্দিরা গাঁধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময়ের ছবিও ছড়াল টুইটারে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
পৌনে ১২টার বদলে মোদীর ভাষণ শুরু হল ১২টা ২৫ নাগাদ। এই দেরি নিয়ে মজা করতেও ছাড়েননি নেটিজেনরা। ভারতীয়রা দেরি করেন, এই প্রচলিত ধারণাকে ভিত্তি করেই, শুরু হয় নানা রসিকতা। টুইটারে ট্রেন্ডিং হয়, ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম’। এক জন লেখেন ‘‘প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড টাইম মেনে চলেন।’’ কেউ লিখলেন, ১৫-৩০ মিনিটের দেরি কিছুই নয়। একে বলে ‘ইন্ডিয়ান স্ট্রেচেবল টাইম।’ ট্রেন্ডিং হল সেই শব্দবন্ধও। তবে বক্তৃতা চলার সময়েই টুইট ট্রেন্ডের তালিকায় উল্কাগতিতে ঢুকে পড়ল অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের পরীক্ষা সম্পর্কিত নানা শব্দবন্ধ। ভাষণ শুরুর আগে যে তালিকায় ছিল, #ওয়েডনেসডেউইজ়ডম, #অপনাভোটসহিহাতমে, #ওয়ার্ল্ডথিয়েটারডে-র মতো হ্যাশট্যাগ, তার জায়গা নিল #মিশনশক্তি, #পিএমঅ্যাড্রেসটুনেশন, #ডিআরডিও, #এএসএটি, #ইসরো প্রভৃতি। কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বজোড়া টুইট ট্রেন্ডেও সবার উপরে জায়গা করে নেয় #মিশনশক্তি।
মোদীর ভাষণের কিছু পরে মহাকাশ গবেষণায় এই সাফল্যের জন্য ইসরো, ডিআরডিও এবং সরকারকে টুইটারে শুভেচ্ছা জানায় কংগ্রেস। তবে এই গবেষণায় জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গাঁধীর অবদানের কথাও বলা হয়। বিকেল ৪টে নাগাদ ট্রেন্ডিং তালিকায় ঢোকে, ‘নেহরু’। নেহরু-নামে ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা নামেন শাসক দলের সমর্থকেরাও। অনেকে একে পোখরানের পরমাণু বিস্ফোরণের সঙ্গে তুলনা করেন। বিরোধীরা পাল্টা বলেন, বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব কেড়ে নিতে চাইছে বিজেপি। শুরু হয় ‘মিম’-এর লড়াই। সমবেত টুইট-তরজায় বিশ্বব্যাপী ট্রেন্ডিং তালিকাতেও ‘নেহরু’ ঢুকে পড়েন প্রথম দশে।
রাতের দিকে এল নতুন ‘মিম’। চাঁদের মাটিতে দাঁড়িয়ে মোদী। বলছেন, ‘‘মন্দির এঁহি বনায়েঙ্গে!’’