শ্যামশরণ নেগি। —নিজস্ব চিত্র।
কোনও কোনও দিন সকাল ১০টা বেজে যায়। এক শতাব্দী পুরনো শরীর বিছানা, লেপ, কম্বলের উষ্ণতা ছাড়তে চায় না। বড়ই ঠান্ডা কল্পায়। গত বুধবারেও বরফ পড়েছে। কিন্তু একবার বিছানা ছাড়ার পরেই তিনি চনমনে। যেমন চনমনে লোকসভা ‘চুনাও’ ঘোষণার খবরে।
শ্যামশরণ নেগি। স্বাধীন ভারতের প্রথম ভোটার। সেই ১৯৫১ সাল থেকে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে চলেছেন। থাকেন হিমাচলপ্রদেশের কিন্নর জেলার কল্পায়। এখন বয়স ১০২ বছর। শরীর স্বাভাবিক ভাবে কমজোরি। কানে প্রায় শোনেন না। কথাও থমকে থমকে। তবে মনের জোর অটুট। ছোট ছেলে চন্দ্রপ্রকাশ মোবাইলে বললেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরেই বাবা আমাকে বললেন, যতদিন বেঁচে থাকব, ভোট দেবই।’’
চন্দ্রের কাছেই থাকেন শ্যামশরণ। বাবা কানে কম শোনায় কথাবার্তা মূলত তিনিই বলেন ফোনে। বড় ছেলে ওয়াং চেন্নোকে সেনাবাহিনীতে পাঠানোর ইচ্ছে ছিল শ্যামশরণের। সে জন্য ভর্তি করেছিলেন দেহরাদূন সেনা স্কুলে। যদিও ছেলে পরে ব্যাঙ্কের আধিকারিক হন। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। মেজ ছেলে ওমপ্রকাশ। পরিবার নিয়ে অন্যত্র থাকেন।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেমন ভাবে দিন কাটে ভারতের প্রথম ভোটারের? চন্দ্রপ্রকাশ বললেন, ‘‘সকালে কোনও কোনও দিন ৮টার সময়ে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। মৌসম খারাপ থাকলে উঠতে ১০টা বেজে যায়।’’ তারপর ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ মিলিয়ে ‘ব্রাঞ্চ’। ভোট ঘোষণার পরে বাড়িতে প্রতিদিনই কোনও না কোনও সাংবাদিক আসছেন। তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে চালাতে চলে কয়েক দফা চা পান। বছরের অন্য সময়েও তাই। দিনেমানে চা চলে। সন্ধ্যার পরে রাতের খাওয়া। দু’টো চাপাটি সঙ্গে কিছু আনাজের পদ। আর অবশ্যই এক গ্লাস দুধ।
২০১৪ সালে চন্দ্রপ্রকাশের মা মারা গিয়েছেন। বাবা একাকিত্বে ভোগেন? চন্দ্রপ্রকাশ হাঁ হাঁ করে উঠলেন প্রায়। বললেন, ‘‘একদমই নয়। উনি সারাদিন আমার স্ত্রীর সঙ্গে নানা কথা বলতে থাকেন।’’ বাড়িতে বেশির ভাগ দিনই এই তিনটি প্রাণী। চন্দ্রপ্রকাশের দুই মেয়ে, এক ছেলে। পড়াশোনার কারণে তারা বাইরে থাকে। অবসর সময়ে শ্যামশরণের সঙ্গী একটি রেডিয়ো। কানের কাছে রেডিয়ো ধরে শোনেন তিনি।
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ে ভেঙে পড়ল ফুটব্রিজ, চাপা পড়ে মৃত্যু অন্তত ৬ জনের
শ্যামশরণদের কল্পা মান্ডি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। ১৯৫১ সালের ২৫ অক্টোবর চিন্নি বিধানসভা কেন্দ্রে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে ভোট দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তাঁদের এলাকায় প্রথম ভোট গ্রহণ করা হয়েছিল। ফেব্রুয়ারিতে ভারতের বাকি অংশে ভোটগ্রহণ হয়। আশঙ্কা ছিল, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের সময় ওই এলাকা বরফে ঢেকে যাবে। তাই কয়েক মাস আগে ভোটগ্রহণ।
আরও পড়ুন: দলবদলের সঙ্গে ভোলবদলও হল অর্জুনের
গত লোকসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন শ্যামশরণকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ করেছিল। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা তাঁকে গাড়ি করে ভোট দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার আগে তাঁকে বাড়িতে এসে ভিভিপ্যাট ব্যবহারের কৌশল শিখিয়ে গিয়েছিলেন নির্বাচনী আধিকারিকেরা। এবারও তাঁদের যাতায়াত চলছেই।
শ্যামশরণও প্রস্তুত। ও হ্যাঁ, যেদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েন, ‘মৌসম’ ভাল থাকে, সেদিন বাড়ির সামনে হালকা ব্যায়াম করেন তিনি। ১৯ মে ভোট দিতে হবে যে!