গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
তিনি দল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, শুনে দু’চোখ জল এসে গিয়েছিল প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর। কিন্তু এক বারও নিষেধ করেননি। জানালেন ২০ বছর পর বিজেপি ছেড়ে সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া সাংসদ-অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা।
এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিহারের পটনা সাহিব লোকসভা আসনের সাংসদ শত্রুঘ্ন বলেছেন, ‘‘দলটার সঙ্গে এত বছরের সম্পর্ক। আডবাণীজির সঙ্গে সম্পর্কটাও তো কম দিনের নয়। তাই মনে করেছিলাম, নতুন একটা দিকে যাওয়ার সময় এক বার আডবাণীজির আশীর্বাদ নেওয়া দরকার। তাই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বললাম, দল ছেড়ে দিচ্ছি। কংগ্রেসে যাচ্ছি। শুনে খুবই কষ্ট পেলেন। ওঁর চোখে জল প্রায় এসেই গিয়েছিল। চুপ করে রইলেন কিছু ক্ষণ। কিন্তু এক বারও বললেন না, ‘মত যাও’। বললেন, ‘‘বেশ, যা ভাল বোঝ, কর। ভালবাসা রইল।’’
ভুল করলেন না তো? প্রশ্নে একটুও না থমকিয়ে গিয়ে শত্রুঘ্ন বলেছেন, ‘‘একেবারেই ভুল করিনি। বরং আরও ভাল জায়গায় গেলাম। আরও ভাল দিকে গেলাম।’’
কেন এই ‘আত্মোপলব্ধি? তারও স্পষ্ট জবাব দিতে দেরি করেননি পটনা সাহিব কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ। বিজেপি এ বার তাঁকে আগেভাগে কিছু না জানিয়েই ওই আসনে প্রার্থী করেছে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে। সেই ক্ষোভ বিন্দুমাত্র গোপন না করে শত্রুঘ্ন বলেছেন, ‘‘বিজেপিতে এসেছিলাম, যখন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ছিলেন ক্ষমতার শীর্ষে। তখনকার সঙ্গে এখনকার বিজেপির তফাত অনেকটাই। তখন দলে ছিল লোক শাহি। গণতন্ত্র। এখন দলে চলছে তানা শাহি। স্বৈরতন্ত্র। দলের এই জমানা ( নাম না করে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কথা বলতে চেয়েছেন) কোনও প্রবীণ নেতাকেই গুরুত্ব দিতে চাইছে না। আডবাণীজিকে দিচ্ছে না। দেয়নি বাজপেয়ীজিকেও।’’
আরও পড়ুন- ভারতের স্বাধীনতা, উন্নয়নে অবদান ছিল জিন্নারও, বললেন শত্রুঘ্ন সিন্হা
আরও পড়ুন- ভুয়ো চিঠি! কমিশনে নালিশ জোশীর
রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে শত্রুঘ্ন জানিয়েছেন, যে ভাবে গাঁধীনগর লোকসভা আসনে এ বার আডবাণীজির মতো প্রবীণ নেতাকে টিকিট না দিয়ে অমিত শাহকে দাঁড় করানো হয়েছে, তা অভূতপূর্ব। তাঁকে যে এ বার দল দাঁড় করাচ্ছে না, কোনও প্রবীণ নেতাকে দিয়ে সেই বার্তা আডবাণীজির কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনটুকুও বোধ করেননি কেউ। এটা আগে বিজেপিতে ছিল না।
গত দু’বছর ধরে নোটবন্দি-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের লাগাতার সমালোচনা করেছেন শত্রুঘ্ন। কখনও সে সব বিরোধীদের প্রচারের হাতিয়ারও হয়েছে।
শত্রুঘ্নের কথায়, ‘‘আমি ওঁদের কাছে মাথা নোয়াতে পারব না, আডবাণীজির মতো। আমাকে বসতে বলবে আর আমি চুপচাপ বসে পড়ব, এমন বান্দা আমি নই।’’
তাঁর অভিযোগ, বালাকোট দেখিয়ে ভোটে জিততে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। শত্রুঘ্নের কথায়, ‘‘যেন উনি একাই দেশপ্রেমী! আমি মনে করি, সব ভারতীয়ই দেশপ্রেমী। কিন্তু ওঁর এখন দেশপ্রেম দেখানোর গরজ এতটাই যে, বেকারত্বের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করলেও উনি প্রসঙ্গ বদলে চলে যাচ্ছেন পুলওয়ামা কাণ্ডে। মানুষ যা জানতে চাইছেন, সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না কেন?’’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে তাঁকে ‘আয়রন লেডি (লৌহমানবী)’ বলেছেন পটনা সাহিব আসনের সাংসদ। বলেছেন, ‘‘এক সময় উনি বলতেন, কাঁধে ঝোলাটা নিয়ে নেব। আর হঠাৎই চলে যাব। মনে হচ্ছে, এখন কাঁধে ঝোলাটা নিয়ে এ বার ওঁর চলে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।’’