অচল: যান চলাচল বন্ধে থমকে জম্মু-কাশ্মীর জাতীয় সড়ক। রবিবার। পিটিআই
জম্মু-শ্রীনগর সড়কে সাধারণ যানবাহনের চলাচল বন্ধের প্রথম দিনে রীতিমতো বিশৃঙ্খলা তৈরি হল উপত্যকায়। রাজ্যের এই প্রধান সড়ক বন্ধ থাকায় হাসপাতাল, অফিস যাওয়ার পথে রীতিমতো নাজেহাল হলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লার মতে, ‘‘কাশ্মীরে স্বৈরতন্ত্র শুরু হয়েছে।’’
জম্মু-শ্রীনগর-উরির সংযোগকারী ৩৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়ক রাজ্যের মূল ধমনী। বাকি ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের পাশাপাশি শ্রীনগরের সঙ্গে উপত্যকার অন্য অংশের যোগাযোগেরও মূল পথ এই সড়কই। পুলওয়ামা হামলার পরে বাহিনীর কনভয় চলাচলের সময়ে ওই সড়কের উধমপুর থেকে বারামুলা পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটার পথ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যপালের প্রশাসন। ৩১ মে পর্যন্ত এই পরিস্থিতি চলবে।
আজই ছিল সেই ঘোষণা কার্যকর করার প্রথম দিন। সমস্যা মেটাতে কিছু পদক্ষেপ করেছিল প্রশাসন। রোগী, ছাত্রছাত্রী, সরকারি কর্মীদের যাতায়াতে ছাড় দিতে বিভিন্ন এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু বিশৃঙ্খলা এড়ানো গেল না।
আজ সকাল থেকেই শ্রীনগর-সহ সড়ক সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়েন বহু মানুষ। সকালে শ্রীনগরে নিরাপত্তাবাহিনীকে সড়কে যেতে দিতে অনুরোধ করতে দেখা যায় বহু স্থানীয় বাসিন্দাকে। উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীরের বহু এলাকায় সড়ক কার্যত জনহীন হয়ে যায়। বাসিন্দাদের বড় অংশের দাবি, তাঁরা নিজেদের এলাকায় কার্যত ‘বন্দি’ হয়ে পড়েছেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
স্থানীয়দের দাবি, সব চেয়ে বেশি বিপদে উত্তর ও দক্ষিণ কাশ্মীর থেকে চিকিৎসার জন্য শ্রীনগরে আসতে চাওয়া বাসিন্দারা। ওই সড়কের উপরেই রয়েছে রাজ্যের সাতটি বড় হাসপাতাল। ফলে বড় সঙ্কটে পড়েছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা।
শ্রীনগরের বাড়ি থেকে শহরের বেমিনা এলাকায় এসকেআইএমএস হাসপাতালে পৌঁছতে সকালে বেরিয়ে পড়েছিলেন গুলাম মহম্মদ বাট। ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তাঁর মেয়ে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও কোনও গাড়ি পাননি। অগত্যা রওনা হয়েছেন হেঁটেই। টাংধর সেতুর কাছে পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। বললেন, ‘‘আরও এক ঘণ্টা হাঁটতে হবে।’’ অনন্তনাগের বাসিন্দা এক বর বিয়ে করছেন ডোডার বাসিন্দা কনেকে। প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে জওহর সুড়ঙ্গ পেরোতে হবে তাঁকে। শ্রীনগরে চিকিৎসা করাতে আসছিলেন অনন্তনাগের নিউ কাজ়িবাগের বাসিন্দা দানিশ আলি। অনেক সাধ্যসাধনার পরে নিজের আর পরিবারের ১২ জনের যাতায়াতের অনুমতি জোগাড় করেছেন। অবস্থা দেখে সাইকেলে চেপে হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীনগরের বাসিন্দা ও চিকিৎসক উমর। তাঁর কথায়, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সে চেপে যেতেই পারি। কিন্তু মানুষের যা অবস্থা তাতে ইচ্ছে করছে না।’’
সড়ক সংলগ্ন বেশ কিছু শহর ও গ্রাম থেকে ওই সড়কে সংযোগকারী রাস্তা খুঁড়ে সেগুলি বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। ওই রাস্তাগুলির সঙ্গে মূল সড়কের সংযোগস্থলে লাগানো হয়েছে কাঁটাতার। আজ নানা এলাকায় ওই কাঁটাতারের কাছে দাঁড়িয়ে বাহিনীর কাছে অনুনয়-বিনয় করতে দেখা গিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। তর্কাতর্কিতেও জড়িয়েছেন অনেকে।
আগেই এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন উপত্যকার রাজনীতিকেরা। আজ ফের নরেন্দ্র মোদী সরকার ও রাজ্যপালের প্রশাসনকে এক হাত নিয়েছেন তাঁরা। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা টুইটারে লিখেছেন, ‘‘সকালে উরি যেতে গিয়েই দেখলাম সড়ক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের ফলে কেমন বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এটা একেবারেই অবাঞ্ছিত।’’ পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতে, ‘‘এটা প্যালেস্তাইন
নয়, কাশ্মীর।’’
বুধবার, কাজের দিন ফের বন্ধ থাকবে সড়ক। উৎকণ্ঠায় প্রহর
গুনছে কাশ্মীর।