এক ফ্রেমে: দাদা রাহুল গাঁধী, স্বামী রবার্ট ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। বুধবার অমেঠী আসন থেকে রাহুল মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগের রোড শোয়ে। এএফপি
মাথা খোলা ছোট ট্রাকে রাহুল গাঁধীর পাশে বোন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা এবং ভগ্নীপতি রবার্ট বঢরা। তবে জনতার হইচই বেশি তাঁদের পাশে একই সারিতে দাঁড়ানো দুই কিশোর-কিশোরীকে ঘিরে। প্রিয়ঙ্কা-রবার্টের পুত্র-কন্যা— রাইহান ও মিরায়া।
অমেঠী থেকে তিন বারের সাংসদ রাহুল শুক্রবার প্রায় তিন কিলোমিটার মিছিল করে মনোনয়ন পত্র পেশ করলেন গৌরীগঞ্জের জেলাশাসকের কাছে। আর সেই মিছিলের পুরোভাগে এগিয়ে চলল এই মাথা খোলা ট্রাক। পাশে একটি গাড়িতে সনিয়া। নীচে থেকে সমর্থক-কর্মীরা বারে বারে ফুল ছুড়ে তাদের অভ্যর্থনা জানালেন। চলল জিন্দাবাদ স্লোগান। আর বিজেপি নেতৃত্ব মুখ বেঁকিয়ে বলল— পরিবারতন্ত্র!
সে কথার জবাব দিলেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেসের নতুন সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। বললেন, ‘‘এই অমেঠী আমার বাবার কর্মভূমি। অমেঠীর জমি আমাদের গোটা পরিবারের কাছে পূণ্যভূমি। কিছু কিছু সম্পর্ক হৃদয়ের। ভাইয়ের মনোনয়ন পেশের অনুষ্ঠানে তাই আমাদের গোটা পরিবার তার পাশে থেকেছি।’’
অমেঠীতে রাহুল তো শুধু কংগ্রেসের প্রার্থী নন, সম্মিলিত বিরোধী দল তাঁর পাশে। অখিলেশের এসপি ও মায়াবতীর বিএসপি তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী না-দিয়ে রাহুলকে সমর্থন করেছেন। এ দিনের বিরাট ভিড় দেখে উজ্জীবিত কংগ্রেস সভাপতি মুখোমুখি বিতর্কের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। বিষয় হবে, ‘মানুষ যেগুলির উত্তর চান’ — দুর্নীতি, রাফালের বরাত, নোটবন্দি এবং অমিত শাহের পুত্ররত্ন। রাহুলের কথায়— ‘‘আমি নিশ্চিত, মুখোমুখি বিতর্ক হলে উনি আমার চোখের দিকে তাকাতেও পারবেন না!’’
রাহুল বলেন, ‘‘সাজানো টিভি সাক্ষাৎকারে রাফাল নিয়ে প্রশ্নের জবাবে উনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছিলেন, আপনারা সুপ্রিম কোর্টকেও বিশ্বাস করেন না! ওঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট নাকি রাফাল নিয়ে সরকারকে দোষমুক্ত বলে রায় দিয়েছে, ইত্যাদি। তা হলে আজকের নির্দেশে কী বলল সুপ্রিম কোর্ট? বলেছে, চৌকিদারজি চুরি করেছেন। মেনে নিয়েছে যে রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে। কয়েক মাস ধরে আমি এই কথাই বলে চলেছি— দু’জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত হোক। এক জন নরেন্দ্র মোদী, অন্য জন অনিল অম্বানী।’’ রাহুলের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট ন্যায়ের কথা শুনিয়েছে। আজ তাই তাঁর সব চেয়ে খুশির দিন।
পাল্টা বিজেপি বলছে, সুপ্রিম কোর্ট যা বলেনি সে কথা বলার অর্থ আদালত অবমাননা। বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘রায়ের প্রথম অনুচ্ছেদের অর্ধেকটাও নিশ্চয়ই পড়েননি কংগ্রেস সভাপতি। আর সেটা না পড়ে যদি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলেছে— সেটা আদালতের অবমাননা ছাড়া কিছু নয়। প্রশ্ন ছিল, মামলাকারীরা অবৈধ ভাবে যে নথি জোগাড় করেছেন, সেটি প্রামান্য হিসাবে গ্রাহ্য হবে কি না। আদালত বলেছে— হবে। এর বাইরে বিচারপতিরা কোনও কথা বলেননি।’’ সীতারামনের কথায়, সপরিবার মনোনয়ন জমা দিয়েছেন রাহুল। এই ‘পরিবার’-এর কথাই তো অগুস্তা হেলিপকপ্টার চুক্তির দালাল ক্রিশ্চেন মিশেলের ডায়েরিতে রয়েছে!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অবশ্য অভিযোগ করেছেন, রাহুল বুঝে গিয়েছেন এ বার অমেঠী থেকে তিনি জিততে পারবেন না। সে জন্যই সুদূর কেরালার ওয়েনাডে ‘পালিয়েছেন’। যোগী বলেন, ‘‘চার পুরুষ ধরে রাহুলের পরিবার অমেঠীর সাংসদ থেকেছেন। তিনি নিজেও রয়েছেন। কিন্তু অমেঠীর জন্য কিচ্ছু করেননি। তাই পালাচ্ছেন।’’ যোগীর কথায়, ২০১৪-য় পরাজিত হওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি পাঁচ বছরে রাহুলের চেয়ে বেশি বার অমেঠীতে এসেছেন। অমেঠীর ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। যোগী বলেন, ‘‘রাহুল ওয়েনাডে দাঁড়াবার কথা যে দিন ঘোষণা করেছেন, সে দিনই অমেঠীতে বিজেপির নৈতিক জয় হয়ে গিয়েছে। এ বার ভোটে জয়ের অপেক্ষা।’’
বৃহস্পতিবার মনোনয়ন পত্র পেশ করবেন স্মৃতি, যোগীও সঙ্গে থাকবেন তাঁর।