পটনায় নিজের ভোট দেওয়ার পর নীতীশ কুমার। ছবি: পিটিআই
শেষ পর্যায়ের ভোটগ্রহণ মধ্যগগনে। উঁকি দিচ্ছে এক্সিট পোলের জল্পনা। তার আগেই কিছুটা বেসুরো নীতীশ কুমার। জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়া থেকে প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর কিংবা অযোধ্যা ইস্যুতে কার্যত জোটের লাইনের বিরুদ্ধেই কথা বললেন এনডিএ-র শরিক জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ। জম্মু কাশ্মীরের ওই ধারা তুলে দেওয়া উচিত নয়, পটনায় ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের বললেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। নাথুরাম গডসে প্রসঙ্গে সাধ্বী প্রজ্ঞার ভুমিকা ‘অসহ্য’বলেও মন্তব্য নীতীশের। একই সঙ্গে অবশ্য এও দাবি করেছেন, এ বারও সরকার গঠন করবে এনডিএ জোটই।
২০০৩ সালে শরদ যাদবের জনতা দলের সঙ্গে নীতীশ কুমার-সহ সমতা পার্টির একাংশ মিশে যাওয়ার পর দলের নাম হয় জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ)। তার পর থেকেই বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জোটে রয়েছে জেডিইউ। এ বার লোকসভা ভোটেও বিজেপির সঙ্গেই আসন সমঝোতা করে লড়ছে নীতীশ কুমার-শরদ যাদবদের দল। কিন্তু শেষ দফা ভোটের আগে যখন এক্সিট পোল নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে এবং ভোটের ফল ঘোষণার দিন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখনই নীতীশের এই জল্পনা উস্কে দেওয়া মন্তব্য রাজনৈতিক দিক থেকে তাতপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। আর ৩৫এ ধারায় রাজ্যের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে জম্মু-কাশ্মীর সরকারকেই। লোকসভা ভোটের আগে থেকেই বিজেপি প্রচার করে আসছে, ক্ষমতায় এলে জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়া হবে বা সংশোধন করা হবে।যদিও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং কেউ তাকে আলাদা করতে পারবে না বলেও দাবি বিজেপির। কংগ্রেস, জম্মু-কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স অবশ্য প্রথম থেকেই বিজেপির এই প্রচারের বিরোধিতা করে আসছে।
আরও পডু়ন: মোদী, রাহুল না অন্য কেউ? কার দখলে দিল্লি, আজ বিকেলেই ইঙ্গিত বুথফেরত সমীক্ষায়
আরও পড়ুন: ফের আতরের গন্ধ! ভোট ঘরে তুলতে তৃণমূলের দাওয়াই এ বার মথুরাপুরে
বিজেপি তথা এনডিএর শরিক হয়েও নীতীশ কুমার এ দিন ফের বলেন, জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ এবং ৩৫এ ধারা তুলে দেওয়া ‘জাতীয় ঐক্য ও সংহতির পক্ষে ক্ষতিকারক’। অর্থাৎ কার্যত বিরোধীদের সুরেই কথা বলেন নীতীশ।যদিও নীতীশ গোড়া থেকেই উপত্যকায় এই দুই ধারা তুলে দেওয়ার বিপক্ষে। তবু ভোট শেষের মুখে ফের বিষয়টি উস্কে দেওয়া তাতপর্যপূর্ণ
মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসেকে সাধ্বী প্রজ্ঞা ‘দেশপ্রেমিক’বলেছিলেন। বিজেপির ভোপালের প্রার্থীর মন্তব্য ছিল, গডসে ‘দেশভক্ত ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন’।এই মন্তব্যের জন্য সাধ্বীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হয়েছে। বিজেপির শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি সাধ্বীকে ডেকে পাঠিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নীতীশ কুমার এ দিন আরও কড়া ভাষায় বলেন, সাধ্বী প্রজ্ঞার এই ধরনের মন্তব্য সহ্য করা উচিত নয়।
অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি বিজেপির অন্যতম ভোটের ইস্যু। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার শুনানি চলছে। শীর্ষ আদালতের মধ্যস্থতাকারী কমিটি সম্প্রতি রিপোর্টও দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও রামমন্দির তৈরিতে কট্টর অবস্থান বিজেপির। কিন্তু নীতীশ এ দিন কার্যত তার উল্টো সুরে বলেছেন, আদালতের মাধ্যমেই অযোধ্যা বিতর্কের সমাধান হওয়া উচিত।
এ বার উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহারে ভোট হচ্ছে সাত দফায়। আজ রবিবার সপ্তম তথা অন্তিম দফার ভোটগ্রহণ। এত দফায় ভোট নেওয়ার বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই প্রচণ্ড গরমে এত দফায় ভোট নেওয়া উচিত নয়। ভোট কেন্দ্রে কোনও শেডের ব্যবস্থা থাকে না। ফলে প্রচণ্ড গরমে রোদে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হয় ভোটারদের। এটা খুবই কষ্টকর। তাই ফেব্রুয়ারি-মার্চে ২ থেকে তিন দফায় ভোট করার পক্ষেও মত প্রকাশ করেছেন জেডিইউ নেতা।
শেষ দফার ভোটগ্রহণ শেষ হতেই বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং সমীক্ষা সংস্থাগুলি। এর তিন দিন পর বৃহস্পতিবার ভোটগণনা। এমন পরিস্থিতিতে একাধিক ইস্যুতে কিছুটা হলেও এনডি-এর অন্য সুর কেন নীতীশের গলায়। ফলাফল যাই হোক, শেষ পর্যন্ত যে কোনও শিবিরে ভিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতেই কি নীতীশের এই অবস্থান? জল্পনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজনৈতিক শিবিরের একটা বড় অংশ।