প্রশান্ত কিশোর। ফাইল চিত্র।
রাজনীতির ময়দানে ‘গেম মেকার’ হিসেবেই তাঁর উত্থান। কিন্তু সেই প্রশান্ত কিশোরের কেরিয়ারই নাকি এখন ‘বিপন্ন’! অন্তত তেমন গুঞ্জন রাজনীতির বাতাসে। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের দাবি, প্রশান্তের প্রতিভাই নাকি তাঁর কেরিয়ারকে নিঃশব্দে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে!
রাজনীতির রণকুশলী হিসেবে বিজেপি, জেডি(ইউ), এসপি-র মতো বেশ কয়েকটি দলের হয়ে কাজ করেছেন প্রশান্ত। ফলে কোন রাজনৈতিক দলের বা রাজনীতিকের শক্তি বা দুর্বলতা কোথায় সবই তাঁর নখদর্পণে! আর এটাই নাকি তাঁর কেরিয়ারের ‘চরম প্রতিদ্বন্দ্বী’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১২-তে নরেন্দ্র মোদী যখন তৃতীয় বারের জন্য গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হন, সে সময়েই লাইমলাইটে আসেন প্রশান্ত। রাজনৈতিক মহলে শোনা যায়, সে বছর গুজরাতের ক্ষমতায় মোদীকে নিয়ে আসার পিছনে কাণ্ডারী ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। মোদীকে মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে দিতে ‘চায় পে চর্চা’, ‘সিটিজেনস ফর অ্যাকাউন্টেবল গভর্ন্যান্স’-এর মতো অনুষ্ঠানও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সফল ‘গেম মেকার’ ছিলেন এই প্রশান্ত কিশোরই। তাঁর এই প্রতিভা সহজেই নজর কেড়েছিল অন্য রাজনৈতিক দলগুলির।
আরও পড়ুন: জোরালো হাওয়া কই! প্রথম দফার পর চিন্তা বাড়ল বিজেপির
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
মোদী ক্ষমতায় আসার পরেই নাকি বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে প্রশান্তের। বিজেপির এক সূত্রের খবর, প্রশান্ত নিজের আলাদা একটা দফতর খুলতে চেয়েছিলেন। এবং তা অনেকটা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মতোই। কিন্তু তাঁর সেই পরিকল্পনাকে বাতিল করে দেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই সময়েই দলের কাজের জন্য প্রশান্তকে নিয়োগ করেন জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ কুমার। ২০১৫-র বিহার বিধানসভা নির্বাচনে সে রাজ্যে বিজেপির জয়ের রথ থামিয়ে দিয়েছিল জেডিইউ, আরজেডি এবং কংগ্রেসের জোট। বিজেপিকে থামাতে সেই মাস্টারপ্ল্যান নাকি বানিয়েছিলেন এই প্রশান্ত কিশোরই। সূত্রের খবর, বিহারের মন্ত্রিসভা গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন প্রশান্ত। তাঁকে সেই মন্ত্রিসভাতেও রাখা হয়েছিল। কিন্তু কোনও দফতর দেওয়া হয়নি। এর পর থেকে নাকি দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে শুরু করে। জেডিইউ-এর এক সূত্রের দাবি, প্রশান্ত একসঙ্গে একাধিক দফতর সামলানোর পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু দলের বেশ কয়েক জন শীর্ষ নেতৃত্বের বিরোধিতায় নাকি সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
নিজের কনসালটেন্সি সংস্থা চালানোর পাশাপাশি ২০১৭-য় উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস জোটের হয়ে কাজ শুরু করেন। কিন্তু সে বার তাঁর রণকৌশল বিফলে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে রাজ্যের ক্ষমতায় আসে বিজেপি। এর পর বেশ কিছু সময়ের জন্য আড়ালে চলে যান প্রশান্ত।
দেশের মূল দলগুলি এবং তাদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাদের শক্তি, খামতি— কোনও কিছুই তাঁর অজানা নয়। ফলে সেই সব দল ও নেতাদের ‘গোপন’ বিষয়গুলিই এখন তাঁর কেরিয়ারের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।