প্রচারে পি রাজীব। নিজস্ব চিত্র
বাইরে সবুজ। ভিতরে লাল!
বাড়ির লাগোয়া বাগান থেকে তরমুজ তুলে প্রার্থীর হাতে দিচ্ছেন গেরস্থ মানুষ। বাংলার রাজনীতিতে বাম জমানায় ‘তরমুজ’ শব্দের আলাদা ব্যঞ্জনা ছিল! তবে এই দক্ষিণী কেন্দ্রের তরমুজ সে ‘তরমুজ’ নয়! এ তরমুজ নিখাদ কৃষি-রসায়নের ফসল। তবে প্রার্থীর হাতে ফল ধরিয়ে দেওয়ার মধ্যে রাজনৈতিক আর প্রাকৃতিক বার্তা একই সঙ্গে শামিল।
একটু ভেঙে বলা যাক। রাজ্যসভায় সিপিএমের পি রাজীবকে ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’ বলতেন সাংসদেরা! সীতারাম ইয়েচুরি ছাড়া সাম্প্রতিক কালে এক মাত্র সাংসদ, রাজ্যসভায় যাঁর মেয়াদ ফুরনোর দিনে অরুণ জেটলি-সহ সব দলের তাবড় নেতারা এক যোগে তাঁকে ফেরানোর দাবি তুলেছিলেন। সেই রাজীবের আবার বিশেষ উৎসাহ জৈব চাষে। দলের এর্নাকুলম জেলা সম্পাদক থাকাকালীন তিন বছর আগে এখানে জৈব চাষের উপকারিতা নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রচার শুরু করেছিলেন। তিনি এ বার এর্নাকুলম লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হওয়ায় প্রচারে জৈব পদ্ধতিতে উৎপন্ন ধান, ফল, মাছ পর্যন্ত তুলে দিয়ে ‘স্বয়ম্ভরতা’র বার্তা দিচ্ছেন বহু মানুষ।
রাজীবের এ বারের প্রচার বেশ মজার। বিভিন্ন এলাকায় ফল, আনাজ, মাছ মিলছে দেখে সিপিএম কর্মীরা একটা ছোট ট্রাকে জমিয়ে রাখছেন সে সব। সকালের প্রচার ফুরোলে কোনও মোড়ের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অল্প দামে বেচে দেওয়া হচ্ছে আনাজ, মাছ! রাজীব হাসছেন, ‘‘বিক্রি করে দেওয়াটা খুব সিরিয়াস কিছু নয়। কিনতে এসে লোকে যখন জিজ্ঞাসা করছে কোথা থেকে এল এগুলো, তখন আবার জৈব চাষের উপকারিতা বুঝিয়ে দেওয়া যাচ্ছে!’’ পারাভুর, কালামাসেরির চারটে গ্রাম এখন পুরোপুরি জৈব চাষেই স্বয়ম্ভর। সিপিএমের স্লোগান তৈরি হয়েছে, ‘লেট রাজীব কাম, লেট কোচি গ্রো’।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এমনিতে এর্নাকুলম এবং কোচির বৃদ্ধি হয়েছে অনেকটাই। মেট্রো চালু হওয়ার পরে শহরের চেহারা বদলেছে। তার পাশাপাশি ‘সবুজ বদল’ আনার জন্য লড়ছেন রাজীবেরা। সমবায়ের মাধ্যমে পরিচালিত একটি হাসপাতাল থেকেই কাজ চলছে ‘অর্গানিক ফার্মিং সোসাইটি’র। এই বিষয়ের দায়িত্বে থাকা সিপিএম নেতা আব্বাস জানাচ্ছেন, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজের বহু অংশের সহযোগিতা তাঁরা পাচ্ছেন। অর্থনীতি ও আইনের স্নাতক এবং কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিপ্লোমাধারী রাজীব বলছেন, ‘‘শহরের মধ্যেও বাগান করে জৈব পদ্ধতিতে আনাজ ফলানোর প্রবণতা বেড়েছে। আমরা জৈব পণ্যের বিপণি চালাচ্ছি এই এর্নাকুলমেরই পাডিভাট্টুরে। সুযোগ পেলে ঘুরে দেখবেন।’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং মালয়ালম মুখপত্রের সম্পাদক ঢুকে গেলেন ইন্ডোর স্টেডিয়ামে উঠতি ব্যাডমিন্টন খেলোযাড়দের সঙ্গে সময় কাটাবেন বলে।
অদ্ভুত সমাপতন যে, এর্নাকুলমের বিদায়ী সাংসদ কে ভি টমাস ইউপিএ জমানায় কৃষি ও খাদ্য দফতরেরই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তবে এ বার টমাসের বদলে বিধায়ক এবং এখানকার প্রয়াত সাংসদ জর্জ ইডেনের ছেলে হাইবি ইডেনকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। বিজেপির হয়ে লড়ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আলফন্স কান্ননতানম। আগে ত্রাবাঙ্কোর-কোচিন বা এখনকার এর্নাকুলম কেন্দ্র কংগ্রেসের পক্ষেই থেকেছে অধিকাংশ ভোটে। জৈব পথেই এ বার চাকা ঘোরানোর লড়াইয়ে রাজীব!