নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরব রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধীরা। গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
মহাকাশে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা নিয়ে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনকে (ডিআরডিও) শুভেচ্ছা জানালেন রাহুল গাঁধী। শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রীকেও। তবে সেই শুভেচ্ছা বিশ্ব নাট্য দিবসের। বুধবার দুপুরে দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার কিছু ক্ষণ পরই টুইটারে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান কংগ্রেস সভাপতি, যা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। মোদীকে কটাক্ষ করেই রাহুল তাঁকে নাট্য দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
মহাকাশে এই সাফল্য নিয়ে মোদীর এই ঘোষণায় আপত্তি তুলেছেন বিরোধীরাও। তাঁদের অভিযোগ, বেকারত্ব, নারী নিরাপত্তা-সহ একাধিক ইস্যুতে সরব গোটা দেশ। এমন পরিস্থিতিতে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতেই ঢাকঢোল পিটিয়ে মহাকাশ সাফল্যের ঘোষণা করেছেন মোদী।
এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন নরেন্দ্র মোদী। মহাকাশে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তাঁর ভাষণ শেষ হওয়ার পরই টুইটারে রাহুল গাঁধী লেখেন, ‘সাবাশ ডিআরডিও। আপনাদের সাফল্যে গর্ব বোধ করছি। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও বিশ্ব নাট্য দিবসের শুভেচ্ছা জানাতে চাই।’
রাহুল গাঁধীর টুইট।
আরও পড়ুন: অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইলের সফল পরীক্ষা, মহাকাশে ভারত এখন মহাশক্তি, বললেন মোদী
অন্য দিকে, ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানাতে গিয়ে আবার জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গাঁধীর প্রসঙ্গ টেনে আনে কংগ্রেস। জানিয়ে দেয়, ১৯৬১ সালে জওহরলাল নেহরুই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা প্রকল্পের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইন্দিরা গাঁধীর আমলে ইসরোর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলে মনে করিয়ে দেয় তারা।
তবে কংগ্রেস বা রাহুল গাঁধীর মতো রেখে ঢেকে মন্তব্য করার পথে হাঁটেননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তোলেন তিনি। টুইটারে মমতা লেখেন, ‘ভারতের মহাকাশ গবেষণা বরাবরই বিশ্বমানের। তার জন্য আমাদের বিজ্ঞানীদের নিয়ে গর্ব বোধ করি। বহুবছর ধরে লাগাতার মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়ে আসছেন তাঁরা। কিন্তু নিজে সবকিছুর কৃতিত্ব নিতে অভ্যস্ত নরেন্দ্র মোদী। ভোটের আগে তাই ফায়দা তুলতে নেমে পড়েছেন।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট।
মমতার অভিযোগ, ‘নির্বাচনের আগে বিজ্ঞানীদের কৃতিত্ব ভাঙিয়ে ফায়দা লুটতে চাইছেন মোদী। নিজের স্বার্থসিদ্ধি এবং প্রচারের জন্যই এত নাটক। তাই মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও মিশনের ঘোষণা নিয়ে এত তাড়াহুড়ো। আসলে বিজেপির তরী ডুবতে বসেছে। তাই অক্সিজেন জোগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন মোদী। কিন্তু এতে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে কমিশনে অভিযোগ জানাতে চলেছি আমরা।’ বুধবার নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করতে গিয়েও একই ভাবে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপিকে তুলোধনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট।
আরও পড়ুন: কী এই অ্যান্টি স্যাটেলাইট মিসাইল? দেশের সুরক্ষায় কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনার পাশাপাশি গোটা ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান সীতারাম ইয়েচুরি। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘নির্বাচনের আগে বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বের রাজনীতিকরণ হল। আর তাতে সায়ও দিল নির্বাচন কমিশন। কোন বিশেষ কারণে এমন পদক্ষেপ করা হল, তা জানতে চায় গোটা দেশ।’ নির্বাচন কমিশনার সুনীল আরোরাকে ইতিমধ্যে একটি চিঠিও দিয়েছে বামফ্রন্ট। নির্বাচনের আগে এই ঘোষণা নিয়ে তাদের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে তাতে।
সীতারাম ইয়েচুরির টুইট।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ তুলেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। নিজের টুইটার হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘আজ নিখরচায় ঘণ্টাখানেক টিভিতে মুখ দেখালেন নরেন্দ্র মোদী। তাতে বেকারত্ব, গ্রামীণ সঙ্কট এবং নারী নিরাপত্তা থেকে সরাসরি মানুষে নজর আকাশ অভিমুখে ঘুরিয়ে দিলেন। ডিআরডিও এবং ইসরোকে অভিনন্দন। এই সাফল্য আপনাদের। ভারতকে আরও নিরাপদ করে তোলার জন্য ধন্যবাদ।’
অখিলেশ যাদবের টুইট।
লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বিরুদ্ধে অখিলেশের সঙ্গে জোট গড়েছেন বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী। টুইটারে মোদীকে কটাক্ষ করেন তিনিও। এমনকি নির্বাচন কমিশনকে মোদীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেও আর্জি জানান তিনি। মায়াবতীর কথায়, ‘মহাকাশে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা করে দেশের মাথা উঁচু করার জন্য বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন। কিন্তু তাঁদের সেই কৃতিত্বকে ঢাল করে মোদীর রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা উচিত নির্বাচন কমিশনের।’
মায়াবতীর টুইট।
আরও পড়ুন: রাজ্যের পুলিশ পর্যবেক্ষক আরএসএস ঘনিষ্ঠ, ছবি দেখিয়ে দাবি মমতার
শুধুমাত্র সর্বভারতীয় নেতারাই নন, বিরোধী শিবিরের বিভিন্ন রাজ্যের নেতারাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনায় সরব হয়েছেন। ইউপিএ জমানায় মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে এই স্যাটেলাইট ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেন কংগ্রেস নেতা আহমেদ পটেল। মহাকাশে স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সবরকম ক্ষমতাই ভারতের আছে বলে ২০১২ সালে দাবি করেন ডিআরডিও-র তত্কালীন প্রধান ভিকে সরস্বতী। এত দিন পর তার কৃতিত্ব নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাও। কিন্তু তাঁদের দাবি উড়িয়ে দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ২০১২ সালে সমস্ত প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও ইউপিএ সরকার প্রকল্প শুরু করতে অনুমতি দেয়নি। বরং ২০১৪-য় মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উদ্যোগ শুরু হয় বলে পাল্টা দাবি করেন তিনি।
(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)