রাহুল গাঁধী ও চন্দ্রবাবু নায়ডু। ছবি সৌজন্য টুইটার।
বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল বিজেপিকে বিপুল ভাবে এগিয়ে রাখতেই ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সরব হলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দল যাতে ইভিএমে কারচুপি করতে পারে, সে জন্যই বুথফেরত সমীক্ষার ফলাফল আগাম বিজেপিকে অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার প্রশ্নে প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের নির্দিষ্ট সংখ্যক বুথের ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের ফলের মধ্যে তুলনা করে দেখার সিদ্ধান্ত আগেই নিয়েছিল কমিশন। দুই যন্ত্রের ফলে পার্থক্য দেখা গেলে ভিভিপ্যাটের ফলকেই চূড়ান্ত বলে মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু দুই যন্ত্রের ফলের পার্থক্যে স্বচ্ছতা তথা বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নটি ধাক্কা খাবে কি না, সেই প্রশ্নে নীরব কমিশন কর্তারা। তাই ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের ফলে গরমিল হলেই পুনর্নির্বাচনের দাবিতে আগামিকাল কমিশনের দ্বারস্থ হচ্ছে বিজেপি-বিরোধী ২১টি দল। জানতে চাওয়া হবে ‘মিসিং’ ইভিএম নিয়েও।
কাল বুথফেরত সমীক্ষার ফল আসা শুরু করতেই ইভিএম প্রশ্নে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমীক্ষার ফলকে সামনে রেখে প্রশাসনকে চাপ দিয়ে ইভিএম বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আজ মমতার ধাঁচেই ইভিএম নিয়ে সরব হন একাধিক বিরোধী দলের নেতা। সকলেরই দাবি, ইভিএমের বিশ্বাসযোগ্যাতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই সংশয় ও সন্দেহ নিরসন করতে আরও বেশি কেন্দ্রে ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের ফল মিলিয়ে দেখার দাবি তুলেছেন তাঁরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
দু’বছর আগে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার পরেই ইভিএমে কারচুপির অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মায়াবতী। বিরোধীরা দাবি তোলেন, আগের ব্যালট ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। নির্বাচন কমিশন তাতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। আদালত প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা প্রতিটি বিধানসভার যে কোনও পাঁচটি কেন্দ্রের (আগে ছিল একটি) ইভিএমে পড়া ভোট ও ভিভিপ্যাট যন্ত্রে জমা হওয়া ভোটারদের স্লিপ মিলিয়ে দেখার জন্য নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশনকে। যা মেনে নেয় কমিশন।
আগামী ২৩ মে গণনার দিন শুরুতেই সন্দেহ দূর করতে ইভিএমের ফল ও ভিভিপ্যাট যন্ত্রের স্লিপ গোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। আজ সেই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু বলেন, ‘‘যদি একটি কেন্দ্রে ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য থাকে, তা হলে ওই বিধানসভা কেন্দ্রের সব ক’টি কেন্দ্রের ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্রের তুলনা করে দেখা হোক।’’ একই দাবি জানিয়েছেন সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর কথায়, ‘‘শাসক দল নিজের স্বার্থে ইভিএমে কারচুপি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল সব বিরোধী দল। বুথফেরত সমীক্ষার ফল বিরোধী দলগুলির সেই আশঙ্কাকেই ফের খুঁচিয়ে তুলল। ইভিএম প্রক্রিয়া নিখুঁত নয় বলে বহু উন্নত দেশ ফের ব্যালট প্রথায় ফিরে গিয়েছে।’’ তাঁর মতে, সমীক্ষার ফলাফল দেখিয়ে এক দিকে আঞ্চলিক দলকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। অন্য দিকে ইভিএমে কারচুপি করার তোড়জোড় চলছে। কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি, ‘‘যদি ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়, তা হলে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করেনি কমিশন।’’
কমিশনের বক্তব্য, যদি ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের ফলে পার্থক্য দেখা যায় তা হলে ভিভিপ্যাটের ফলকেই চূড়ান্ত বলে ধরা হবে। দুই যন্ত্রের মধ্যে তুলনা টানার পিছনে কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল, এটা দেখানো যে গোটা ব্যবস্থাটি নিখুঁত। কিন্তু যদি ইভিএম ও ভিভিপ্যাটের গণনায় ফলের পার্থক্য হয়, তা হলে তো গোটা প্রক্রিয়া নিয়েই সন্দেহের বাতাবরণ সৃষ্টি হবে! সেই প্রশ্নে নিরুত্তর কমিশন।
এ রকম হলে ওই লোকসভা কেন্দ্রে যাতে নতুন করে ভোট হয়, তার জন্য আগামিকাল দাবি তুলবেন চন্দ্রবাবু নায়ডু, ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতো নেতারা। প্রশ্ন উঠেছে ‘মিসিং’ ইভিএম নিয়েও। আজ মমতা ও চন্দ্রবাবুর মধ্যে আলোচনায় উঠে আসে যে, কেন্দ্র যে পরিমাণ নতুন ইভিএমের বরাত দিয়েছিল তার মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক ইভিএমের কোনও হদিস নেই। বিরোধীদের সন্দেহ, সেই ইভিএমগুলি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে। তাই কাল কমিশন কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বিরোধী নেতারা কত ইভিএম আগে থেকেই ব্যবহারের উপযুক্ত ছিল, কত ইভিএমের জন্য নতুন বরাত দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচনে কত ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, আর কত ইভিএম ‘রিজার্ভ’-এ রয়েছে তার লিখিত বিবরণ চাইবেন বলে
সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।