নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এপি।
এ বার সাক্ষাৎকার গঙ্গাবক্ষে। প্রথমেই তাই ‘নির্মল’ গঙ্গার প্রসঙ্গ। গঙ্গাকে স্বচ্ছ করে তোলার জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কারের কথা তুলে নরেন্দ্র মোদী আজ প্রমাণ করতে চাইলেন, ‘ঠিক পথে’ই আছেন।
এর পরে যাবতীয় প্রসঙ্গে নিজের ও তাঁর পাঁচ বছরের সরকারের ‘ঠিক পথে’ থাকার ও কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরে দাবি করলেন, ভারতে এই প্রথম কোনও সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে, যেখানে সরকারের অনুকূলে (প্রো-ইনকাম্বেন্সি) হাওয়া বইছে। এবং যার জোরে ২০১৪-র চেয়েও বড় জয় পাবে বিজেপি। প্রতি ক্ষেত্রে বাড়বে জয়ের ব্যবধান। গত ভোটে যে সব এলাকা থেকে আসন আসেনি, এ বারে সে সব জায়গা থেকেও
অনেক আসন আসবে। সন্দেহ নেই, ইঙ্গিতটা পশ্চিবঙ্গ, ওড়িশা ও উত্তর-পূর্বের দিকে। মোদীর মতে, সংবাদমাধ্যমগুলি একটি বিষয় উল্লেখ করছে না, তা হল ২০১৪ সালে কংগ্রেস সবচেয়ে কম আসনে জেতার রেকর্ড গড়েছিল। এ বারের ভোটে সব চেয়ে কম আসনে লড়ার রেকর্ড করেছে। মুম্বইয়ের সভায় মোদীর দাবি, ‘‘কংগ্রেস এ বার ৫০টি আসনও পাবে না।’’ বিজেপি কত আসনে জিতবে? প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সংখ্যা বলব না। এত ভালবাসা পাচ্ছি, যে আমার ভাবনাটাই হয়তো কম পড়ে যাবে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ক’দিন আগে অক্ষয় কুমারকে দেওয়া ‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকারে পরতে পরতে রাজনীতি গুঁজে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজকের সাক্ষাৎকারটি দিলেন একটি সংবাদ-চ্যানেলের তিন প্রতিনিধিকে। কিছু অপ্রিয় রাজনৈতিক প্রশ্নও এল। যেমন ভোটের মুখে যত আয়কর-ইডি অভিযান হচ্ছে, তার প্রায় সবই বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে। এটা কেন? সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে তাঁর সরকার ব্যবহার করছে— এমন অভিযোগও তো উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। মোদীর জবাব, ‘‘কোন শিবিরের সেটা কোনও প্রশ্ন নয়। টাকা উদ্ধার হয়েছে কি হয়নি? মধ্যপ্রদেশে এই সে দিন সরকার হল। এর মধ্যে কোথা থেকে না লুট হয়েছে! গরিবের খাবার লুট করতে দেব? মোদী যদি অন্যায় করে থাকে, তবে মোদীর বিরুদ্ধেও চাপ তৈরি করুন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে আমি মর্যাদা দিই। আমাকেও ন’ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল।’’
সাক্ষাৎকারে যেমনটি বলেছেন, তেমনই মধ্যপ্রদেশের সীধীতে এক ভোটসভাতেও আজ বিরোধীদের এ নিয়ে আক্রমণ করেছেন মোদী। তাঁর কথায়, ‘‘চোরেদেরই বড় গলা! আমাকে কেন ধরলে? আমি তো কংগ্রেসের। আমি তো নেতা! আমি তো মুখ্যমন্ত্রীর আত্মীয়!’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘দেশের আইন সকলের জন্য সমান। মোদীও যদি কোনও ভুল করে, তবে তার ঘরেও আয়কর হানা হওয়া উচিত। আইন সকলের জন্য সমান হওয়া উচিত।’’ মাঠে হাততালি, হাত তুলে ভিড়ের উচ্ছ্বাস।
সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হয়, এই নির্বাচনের প্রধান বিষয় কী? প্রধানমন্ত্রীর জবাব, ‘‘মোদীকে গালিগালাজ করা। তবে তিন দফা ভোটের পর সেটা ভাগ হয়ে গিয়েছে। অর্ধেক গালিগালাজ এখন ইভিএমের দিকে যাচ্ছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’’
চাওয়ালা না চৌকিদার, কোন নামটা পছন্দ? জানালেন, তিন বার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কখনও চাওয়ালার কথা বলেননি। কিন্তু কংগ্রেসের অহঙ্কারের কারণে,
তাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্যের কারণে চাওয়ালার কথাটা সামনে আনতে হয়েছে। আর চৌকিদার নামটা নিজের সিদ্ধান্তে নিয়েছেন। সে-ও কংগ্রেসের অহঙ্কারের মোকাবিলা করতেই।
সাক্ষাৎকারের মাঝেই কেটলি নিয়ে চাওয়ালা এলেন। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। চা খেতে খেতে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পরে নিজের জানা বাংলা শব্দবন্ধে স্বগতোক্তি, ‘‘ভাল আছি।’’ পরে চাওয়ালাও জানালেন, প্রধানমন্ত্রীকে চা খাইয়ে তিনি খুশি।
কিন্তু মোদীর কাছে খুশির অর্থ কী? মোদীর জবাব, ‘‘আপনার মুখে খুশি দেখা। বিশেষ করে গরিবের মুখে।’’ ফের প্রশ্ন আসে, খুশি হলে তার ভাগ দিতে ইচ্ছে হয় কাকে? মোদীর গলা এ বার খানিকটা ভারী। বললেন, ‘‘প্রত্যেকের জীবনে এক জন অন্তত থাকা উচিত, যার কাছে সব বলা যায়। সে বড় হতে হবে, পণ্ডিত হতে হবে, এমন নয়। সে-ও এমন কোনও দিশা দেখিয়ে দিতে পারে, যা অন্যরা পারবেন না।
আপনার ক্ষেত্রে তিনি কে? মোদী জানান, ছিলেন এক জন। উকিলবাবু বলতেন তাঁকে। বেঁচে নেই। কে তিনি? মোদী ভাঙতে রাজি হননি। সাক্ষাৎকার যাঁরা নিলেন, তাঁরাও যশোদাবেনের প্রসঙ্গ এড়িয়ে জানতে চাইলেন, মাইনে কী করেন? মায়ের কাছ গেলে যে ১১ টাকা করে পান— তারই বা কী করেন?
মোদী হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘মা এক বার পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। আমি তো অবাক। মা বললেন, কাশ্মীরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দিও। আমার পকেটে পয়সা থাকে না।’’ এই সূত্রে মোদী বলেন, ‘‘অনেকের হজম হবে না কথাটা, ৩৫ বছর আমি ভিক্ষে করে খেয়েছি।’’ সঙ্গে জানান, শাখার জীবনে ঘর ঝাড়তেন (ইন্টারনেটে যে ছবিটা দেখা যায়, সেটা অবশ্য জাল, জানালেন নিজেই)। চা, পোহা (চিঁড়ের পোলাও) করে সকলকে খাওয়াতেন। সঙ্গে বললেন, ‘‘এ সব কৃচ্ছসাধন নয়। এ সবই তাঁর কাছে জীবনের পাঠ। মোদী কোনও ব্র্যান্ড নয়। মোদী একটা জীবন।’’
সাক্ষাৎকারে শেষে মোদীর কটাক্ষ, এত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাবে এত এত গালি আসছে!