মায়াবতী। -ফাইল ছবি
লাল-নীল-সবুজের মেলা বসেছে।
লাল ছবিতে অখিলেশ যাদব। নীল ছবিতে মায়াবতী। সবুজে অজিত চৌধরি। সত্যিই মেলা। লাল টুপিতে নীল-সবুজ পতাকা। পত পত করে উড়ছে হাতে হাতে। নরেন্দ্র মোদীর সভার মতো ‘মোদী-মোদী-মোদী’ হয় না। কিন্তু উচ্ছ্বাসটা বেরিয়ে আসে আইপিএলের ছক্কা হাঁকানোর মতো। দেওবন্দের এই মাঠের পাশেই দারুল উলুম। অন্য দিকে দলিত গ্রাম। অন্যান্য অনগ্রসররাও পায়ে হেঁটে আসছেন পাঁচ কিলোমিটার। যোগী সরকার সমস্ত বাস আগেই আটকে রেখেছে। আলপথ ধরে আসছেন জাঠেরাও। এটা মেলা নয়তো কী?
উত্তরপ্রদেশের সভায় সভায় বিরোধী এই মহাজোটেই ফাটল ধরাতে প্রধানমন্ত্রী কখনও টেনে আনেন সিকি-দশক আগে গেস্টহাউস কাণ্ড। কখনও বা চরণ সিংহের বন্দনা করে চিড় ধরাতে চান জোটে। কিন্তু মেলার ছবিতে ছিটেফোঁটাও চিড় ধরাতে পেরেছেন কি প্রধানমন্ত্রী? আজ দেওবন্দে মায়াবতী-অখিলেশ যাদব আর চৌধরি অজিত সিংহের প্রথম যৌথ সভায় নেতাদের আগমনের আগে তো সে ছবি দেখা গেল না।
অজিত এলেন দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে। সড়ক পথে। ২৭ মিনিট পর কপ্টার নামল অখিলেশের। আরও ১৭ মিনিট পরে বহেনজির। অজিত সিংহ আগে থেকেই মঞ্চে ছিলেন পুত্র জয়ন্তকে নিয়ে। কিন্তু প্রথম তিনটি আসনে বসেননি। অখিলেশও মঞ্চের পিছনে অপেক্ষা করছিলেন বহেনজির পথ চেয়ে। এর পরে মায়া-অখিলেশ মঞ্চে এলেন। ফের মাঠের বাইরে ছক্কা হাঁকানোর রোল। উচ্ছ্বাসে ভেসে অখিলেশ হাত নাড়িয়ে চলে গেলেন সকলের মাঝখানে। সেটা আবার পছন্দ হল না বহুজন নেত্রীর। অখিলেশকে পাশে সরে আসতে নির্দেশ দিলেন। সতীশ মিশ্র এগিয়ে গিয়ে অখিলেশকে সরে আসতে বললেন। যে সতীশ মায়ার নির্দেশে গত কাল অখিলেশ-জায়া ডিম্পলের মনোনয়ন পেশের সময়ে সঙ্গে থেকেছেন।
নেতাদের আসার আগে মঞ্চে গান বাজছিল— ‘মায়া অউর অখিলেশ/ মিল কে দিয়া রেস/ পাশা উনিশ মে পাল্টাই/ লহর ছায়ি ইউপি মে’। ঘোষণা হচ্ছিল, কেউ যেন ‘সিটি’ না বাজায়। ফজলুল রহমান থেকে আকাশ পরমার একযোগে বলছিলেন, ‘‘ভোট এ বারে জোটে।’’ কিন্তু মঞ্চে এসেই মায়া বুঝিয়ে দিলেন, তিনিই জোটের ‘বস’। মঞ্চের ঠিক সামনে অখিলেশ, মুলায়ম, অজিতের সঙ্গে তাঁর একখানি নয়, দু’খানি ছবি। বসলেনও মাঝখানে। বললেন সকলের আগে। এক মঞ্চে তিন তাবড় নেতা। চিৎকার শুনে নেতাদের মুখে হাসি আপনা থেকেই বেরিয়ে আসছে। মায়াবতী তো বলেই ফেললেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন এই ভিড়ের খবর পাবেন, নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবেন। বিজেপি যাচ্ছে, জোট আসছে। তবে ভোটযন্ত্রে কোনও বেইমানি না-করলে।’’ সুর মেলালেন অখিলেশও, ‘‘এই জোটকেই প্রধানমন্ত্রী ‘মদ’ বলেছেন। আসলে ক্ষমতার নেশা। বিদায় নিশ্চিত।’’
কিন্তু মঞ্চ থেকে এক জনের ছবি দেখে বিরক্ত হলেন মায়াবতী। জনতার হাতে হাতে ভীম আর্মির প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রশেখর আজাদের ছবি। আজাদ নিজে থাকেননি। কিন্তু সমর্থকদের পাঠিয়ে দিয়েছেন ছবি দিয়ে। চোখে সানগ্লাস, গোঁফে তা দেওয়ার ছবি। ক’দিন আগেই যাঁকে মায়া বলেছেন, ‘‘বিজেপির এজেন্ট।’’