ফের মোদীকে আক্রমণ মমতার। —ফাইল চিত্র।
দেশের দুর্ভাগ্য তাই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। হাঁকডাক যতই করুক, বাংলায় শূন্য পাবে বিজেপি, রবিবার বিশাখাপত্তনমে তেলুগু দেশম নেতা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর প্রচারসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে এই ভাষাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তোপ দাগলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চন্দ্রবাবু নায়ডু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি এই সভায় ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুও। এ দিন বিশাখাপত্তনমের সভায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলনেত্রীর নিশানায় ছিলেন নরেন্দ্র মোদীই। তাঁকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘‘চা-ওয়ালা থেকে চৌকিদার হয়েছেন মোদী। কিন্তু আসলে তিনি মিথ্যা বলা চৌকিদার... দেশ লুটের চৌকিদার... নোটবন্দির চৌকিদার।’’
অন্ধ্রপ্রদেশে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন। সেই উপলক্ষেই চন্দ্রবাবু নায়ডুর ডাকে বিশাখাপত্তনমে বিজেপি বিরোধীদের সভায় হাজির হয়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। আর শুরুতেই তেলুগুতে ভাষণ দিয়ে উপস্থিত জনতার মন জয় করে নেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘দেশের দুর্ভাগ্য তাই নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। অমিত শাহর সঙ্গে মিলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করাই মোদীর এক মাত্র কাজ। গোয়েন্দা লেলিয়ে দেন। ধমকে চুপ করিয়ে দিতে চান সকলকে। শুধুই ভয় দেখিয়ে বেড়ান। গত পাঁচ বছরে আর কিছু করেননি উনি। তাই ওঁর আমলে দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। গত ৪৫ বছরে বেকারত্বের হার সর্বাধিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।’’
৫৬ ইঞ্চির ছাতি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে একটাও সাংবাদিক বৈঠক করার সাহস পাননি নরেন্দ্র মোদী। আসলে উনি তো টেলিপ্রম্পটার দেখে বক্তৃতা করেন। ৫৬ ইঞ্চির ছাতি নিয়ে ৫৬০ ইঞ্চির মিথ্যা বলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন কী করে? ব্লক স্তরের নেতা হওয়ারও যোগ্যতাও নেই মোদীর। কথায় বলে, চোরের মায়ের বড় গলা। সবার পিছনে গোয়েন্দা লেলিয়ে দিয়েছেন। অথচ রাফাল দুর্নীতি নিয়ে একটা কথাও বলছেন না।’’
আরও পড়ুন: তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মমতা, দাবি শত্রুঘ্নের
আরও পড়ুন: রামদাসের শোকগাথাই সার, আলো পড়ে না তেলঙ্গ টাকলির মুখে
মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে পুলওয়ামা প্রসঙ্গও টেনে আনেন মমতা। তাঁর দাবি, ‘‘পুলওয়ামার পর সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। কিন্তু হামলার পর একবারও সর্বদলীয় বৈঠক করেননি মোদী। নোটবন্দির ফলে সন্ত্রাস নির্মূল হবে বলে একটা সময় খুব হাঁকডাক করেছিলেন। কিন্তু ওঁর শাসনকালে সন্ত্রাসের আগুনে জ্বলছে গোটা দেশ। দেশ এরকম প্রধানমন্ত্রী চায় না।’’
নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে একাধিকবার বিরোধী জোটকে বিদ্রূপ করেছেন নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু মমতার কথায়, বিরোধীরা কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে তা দেখার দরকার নেই মোদীর। ভোটের পর আমরা তা নিজেরা বুঝে নেব। প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্য তর্কযুদ্ধে নামার চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘সাংবাদিক বৈঠক তো করেন না। তাহলে প্রকাশ্য তর্কযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেখান। ঠিক বিদেশে যেমন টা হয়। ওঁর সঙ্গে তর্কযুদ্ধে নামতে প্রস্তুত আমি। ওঁর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুত আমি। কিন্তু আমার সব প্রশ্নের উত্তরও ওঁকে দিতে হবে।’’
বিশাখাপত্তনমে এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালও। দিল্লির প্রশাসনিক কাজে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ নিয়ে নতুন করে অভিযোগ তোলেন তিনি। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের দাবিও জানান। তাঁর দাবিকে সমর্থন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘একে একে সব প্রতিষ্ঠানগুলিকে নষ্ট করে দিচ্ছে মোদী সরকার। ফের ক্ষমতায় এলে সংবিধানটাকেও নষ্ট করে দেবে। এতদিনে দেশে ঘৃণা ও ধর্মীয় বিভাজন ঘটানোর চেষ্টা ছাড়া কিছুই করেনি ওরা।’’ তাই সাধারণ মানুষকে ভেবেচিন্তে ভোট দিতে আর্জি জানান তিনি।
(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)