ধর্মান্ধতা, ঘৃণা এবং উদাসীনতাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করুন— ৬০০ জনেরও বেশি থিয়েটার কর্মী একটি বিবৃতিতে এ ভাবেই আবেদন জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। তাঁদের সাফ কথা, বিজেপি ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে ভোট দিন। একই সুরে কলকাতায় শঙ্খ ঘোষ, নবনীতা দেবসেন-সহ বিশিষ্ট জনেরা সম্মিলিত ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন বিজেপি ও তার সহযোগী দলগুলিকে বর্জন করার। কোনও রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে সংস্কৃতি জগতের ব্যক্তিত্বদের তরফে সরাসরি ভোট দেওয়ার এমন আহ্বান সাম্প্রতিক কালে বিরল।
শঙ্খবাবুরা শুক্রবার একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল, যার নাম বিজেপি, তার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সেই দল আসার পরে দেশের সার্বিক অবস্থা চূড়ান্ত অবক্ষয়ের রাস্তায়’। বেকারিত্ব, কৃষকমৃত্যু, মূল্যবৃদ্ধি এবং ধর্মীয় হানাহানি ও জাতিগত বিদ্বেষের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নানা পেশায় ‘কর্মরত ও কর্মহীন মানুষে’র তরফে তাঁরা দেশের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, ‘সামনের লোকসভা নির্বাচনে ফ্যাসিস্ত বিজেপি ও তার সঙ্গী রাজনৈতিক দলগুলিকে বর্জন করুন’। ফ্যাসিবাদী বিজেপি ও সহযোগীদের পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়ে ১২ এপ্রিল কলকাতায় মৌলালি থেকে রবীন্দ্র সদন পর্যন্ত পদযাত্রারও ডাক দিয়েছেন তাঁরা।
মুম্বইয়ে অমল পালেকর, অনুরাগ কাশ্যপ, লিলেট দুবে, নাসিরুদ্দিন শাহ, রত্না পাঠ শাহ, মহেশ দত্তানি, কঙ্কনা সেনশর্মারা একই সুরে তাঁদের বিবৃতিতে লিখেছেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং সকলের জন্য সরকার গড়তে বিজেপি ও তার শরিকদের বিরুদ্ধে ভোট দিন।’ তাঁরা বলেছেন, ‘দুর্বলতমের হাতে ক্ষমতা, সংহতি রক্ষা, পরিবেশ সুস্থ রাখা এবং বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তার উন্মেষের জন্য ভোট দিন।’ এই বিবৃতি ১২টি ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এ বারের নির্বাচন সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। লেখা হয়েছে, ‘উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলেও হিন্দুত্বের জিগির তুলে গুন্ডামিকে প্রশ্রয় দেওয়া শুরু করেছে। পাঁচ বছর আগে যে ব্যক্তি জাতির রক্ষাকর্তা হিসেবে এসেছিলেন, তিনি তাঁর নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষের বেঁচে থাকা দুর্বিষহ করে তুলেছেন।’ শিল্পীদের মতে, ‘ভারত নামের ধারণাটাই আজ বিপন্ন। আজ হাসি, গান, নাচ সবই হুমকির মুখে। আমাদের সংবিধানও বিপন্ন। যে সব প্রতিষ্ঠানে যুক্তি, তর্ক, মতামত বিনিময়ের পরিসর ছিল, তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। প্রশ্ন করলে, মিথ্যের বিরুদ্ধে সরব হলে, সত্য বললে জাতীয়তাবাদ-বিরোধী বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে’।