বিজেপি বিধায়ক রাজা সিংহ
মুড অফ রাজার!
আজকাল কেমন যেন থম মেরে গিয়েছেন বিজেপির ‘তাজা নেতা’ ঠাকুর রাজা সিংহ লোধ। তেলঙ্গানা বিধানসভায় দলের সবেধন নীলমণি। নিজামের শহর হায়দরাবাদে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগেও খুল্লমখুল্লা মুণ্ডছেদের হুমকি দিয়েছিলেন এমআইএম সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসির ভাই আকবরুদ্দিনকে। কিন্তু ইদানীং তাঁর মুখে কুলুপ। ব্যাপার কী?
অভিমানী রাজা নিজেই টুইটারে জানালেন, তাঁর ফেসবুক পেজ মুছে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সেই পেজ, যেখানে তিনি অসমে এনআরসি প্রস্তাব নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘অবৈধ বাংলাদেশিরা না-গেলে, গুলি করে মারা উচিত।’’
পাশে নীল টিক দেওয়া ‘অফিশিয়ালি ভেরিফায়েড পেজ’— রাজার বড় আদরের। ২০১২-১৩ থেকে যেখানে তিনি নাগাড়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য করে গিয়েছেন। লোকসভা ভোটের মুখে সেই পেজটাই রাতারাতি মুছে ফেলেছে ফেসবুক। কোনও পেজ বা অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিপোর্ট হলে মার্ক জ়াকারবার্গের সংস্থা নিজস্ব সিস্টেমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। সভা ও ওয়েবে উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য ৬০টিরও বেশি মামলা হয়েছে রাজার নামে। অথচ তিনি যেন এ সবের কিছুই জানেন না! তাই টুইটারেই রাজা এখন জানতে চাইছেন, কেন তাঁর পেজ মুছে দেওয়া হল?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ব্যস, এটুকুই। তাঁর টুইটারও দেখাচ্ছে— মেজাজ খারাপ রাজার। দ্বিতীয় দফায় বিধায়কের দৌড়ে নামার আগে জানিয়েছিলেন, যারা গোরক্ষক নয়, সেই মুসলিম ভোটের তাঁর দরকার নেই। অমুসলিম নেতারা ইফতারের আয়োজন করলেই বলতেন— ‘ভোট কা ভিখারি’! কিন্তু এখন সেই দাপট কোথায় রাজার! টুইটার অ্যাকাউন্টে তাঁর নামের আগে লেখা ‘চৌকিদার’, আর নীচে— ‘টাইগাররাজাসিংহ’। দলের হয়ে সেখানে লোকসভা ভোটের প্রচার করেছেন বটে। তবে নেহাতই নিরীহ প্রজার মতো। গত বছর বিধানসভা ভোটের আগে রাজার জন্যই প্রচারে এসেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অথচ সেই রাজাই এখন একা! ফেসবুক পেজ বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে শুধু বললেন, ‘‘এ সব চক্রান্ত।’’ কাদের চক্রান্ত? উত্তর নেই। শুধু নিজের ডান হাত অনুজ শর্মার নম্বর দিয়ে বললেন, ‘‘বাকি কথা ওঁর সঙ্গে।’’ বিদায় নিলেন রাজা। আর যাওয়ার আগে গেরুয়া পাগড়ি-বসনের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি-টা নিজেই মুছে দিয়ে গেলেন।
তাঁর ফেসবুকে ‘অঘটন’ নিয়ে প্রশ্ন করায় রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শ্রীধর রেড্ডি ফোনে বললেন, ‘‘কোনটা উস্কানিমূলক মন্তব্য, সেটা কি আজকাল ফেসবুক ঠিক করে দিচ্ছে নাকি! হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে তো তা হলে এখানে ওয়াইসি আর কাশ্মীরে ওমর আবদুল্লাদের পেজও বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’
বিধায়কের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার অনুজও দাবি করলেন, গত দু’মাসে একটিও কুকথা বলেননি রাজা। ‘‘ওঁর প্রোফাইল বহু বার হ্যাকড হয়েছে।’’—বলে তিনিও বিদায় নিলেন। যাওয়ার আগে নিজের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি মুছে দিয়ে গেলেন রাজার ওয়েব-সেনাপতিও!