চাপের মুখে চৌকিদারের জোর বাড়াতেই এখন মরিয়া মোদী।
নোটবন্দি থেকে সার্জিকাল স্ট্রাইক— কোনও অস্ত্রই কাজে আসছে না। গত লোকসভা ভোটের আগে নিজেকে ‘দেশের চৌকিদার’ দাবি করা নরেন্দ্র মোদী এ বার ফের সেই স্লোগান অন্য ভাবে ব্যবহার করতে চাইলেও তাকে ভোঁতা করতে আসরে নেমেছেন রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধী। অখিলেশ-মায়াও ছুড়ছেন পাল্টা ‘চৌকিদার’ বাণ। চাপের মুখে চৌকিদারের জোর বাড়াতেই এখন মরিয়া মোদী।
রাফাল-প্রশ্নে দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাহুল স্লোগান তুলেছিলেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়।’ সার্জিকাল স্ট্রাইক নিয়ে আসর গরম করার চেষ্টা করলেও সেই স্লোগানকে ঢাকা দেওয়া যায়নি। ক্ষত মেটাতে নিজের নামের সঙ্গেই ‘চৌকিদার’ জুড়ে দেন মোদী। বাকিদেরও জুড়তে বলে চৌকিদারের দায় ভাগ করতে চেয়েছেন। সেই লক্ষ্যে শুরু করেছেন ‘আমিও চৌকিদার’ অভিযান। আজ দল দাবি করল, দেশে এক কোটির বেশি লোক এমন ‘চৌকিদার’ হয়েছেন। তাঁদের থেকেই ২৫ লক্ষকে বেছে নিয়ে আগামিকাল ‘দোলের মেজাজে’ অডিয়ো বার্তা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ করে যখন কালই প্রিয়ঙ্কা বারাণসীতে গিয়ে দোল খেলবেন। ৩১ মার্চ ফের দেশের পাঁচশো জায়গায় ‘চৌকিদার’দের ভিডিয়ো বার্তা দেবেন। সেখানে এনডিএর শরিকেরাও সামিল হবে বলে আজ জানাল বিজেপি। যদিও এই শরিকেরাই মোদীর দায়ের ভাগ নিতে নারাজ। ‘আমিও চৌকিদার’ স্লোগানে গলা মেলায়নি তাদের অনেকেই।
রাহুল গাঁধী গতকালই বলেছিলেন, ‘‘চুরি ধরা পড়তেই প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশকে চৌকিদার হতে বলেন!’’ বারাণসীর পথে প্রিয়ঙ্কাও বলেন, ‘‘চৌকিদার ধনীদের হয়, গরিবদের নয়।’’ ভাই-বোনের জুটির আক্রমণ সামলাতে আজ রবিশঙ্কর প্রসাদকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করায় বিজেপি। সেখানে রাহুল-প্রিয়ঙ্কার পরিবারতন্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘জামিনে যাঁরা ছাড়া আছেন, চৌকিদার হতে তাঁদেরই আপত্তি। রাহুল-প্রিয়ঙ্কাও কেন চৌকিদার হচ্ছেন না?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু শুধু তো রাহুল-প্রিয়ঙ্কা নন। আজ মায়াবতীও টুইটে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘তা হলে নরেন্দ্র মোদী এ বারের ভোটে আর ‘চাওয়ালা’ নন, ‘চৌকিদার’! বিজেপির অধীনে দেশের কী বদল দেখছি! সাবাশ।’’ অখিলেশ আবার নিয়ে এলেন নতুন হ্যাশট্যাগ— ‘বিকাশ পুছ রাহা হ্যায়’। এই হ্যাশট্যাগে রাফালের ফাইল চুরি থেকে কৃষকদের বিমা খাতে দুর্নীতি— তুললেন অনেক প্রশ্নই। ছাড়লেন না লালু-পত্নী রাবড়ী দেবীও। তিনি শোনালেন, ‘‘এক নাক কাটা ব্যক্তি বেইজ্জত হওয়ার পর অন্ধভক্তদের নাক কাটিয়ে দেন! নিজের অসম্মান সকলের সঙ্গে ভাগ করে নেন!’’ সঙ্গে তিনিও জুড়লেন ‘চৌকিদারই চোর’।
স্লোগান বদল
• ২০১৩: একশো দিনে ৮০ লক্ষ কোটি টাকা কালো টাকা ফেরত
• ২০১৩: সকলের ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা করে আসবে
• ২০১৪: অচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়
• ২০১৫: সবকা সাথ, সবকা বিকাশ
• ২০১৬: নতুন ভারত বানাব
• ২০১৭: মেরা দেশ বদল রহা হ্যায়
• ২০১৮: সাফ নিয়ত, সহি বিকাশ
• ২০১৯: ম্যায় ভি চৌকিদার
রাহুল আজ উত্তর-পূর্বে। দিল্লিতে দলের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাকে দিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করায় কংগ্রেস। রণদীপ বলেন, ‘‘গোটা চৌকিদার পর্ব দেখে মনে হচ্ছে, ‘মোদীবাবা আর চল্লিশ চোর’! নরেন্দ্র মোদী তাঁর ১০ লাখি সুট আর ৫ হাজার পোশাকও তত পাল্টাননি, যত বার স্লোগান পাল্টেছেন! সবই বিফল হয়েছে। তাই একই ব্যক্তিকে বারবার নতুন করে ব্র্যান্ডিং করতে হয়।’’
যে যা-ই বলুক, এই অস্ত্রও ভোঁতা হওয়া কি এ ভাবে ছাড়তে পারেন মোদী? তাই টুইটে আজ নানা বয়সের মহিলাদের ভিডিয়ো রিটুইট করেছেন। যাঁরা মোদীর ‘আমিও চৌকিদার’ স্লোগানে সাড়া দিয়েছেন। তাঁদের জানিয়েছেন, ‘‘মহিলারা চৌকিদার হলে দেশ নিরাপদ হাতে। ৩১ মার্চ বিকাল পাঁচটায় দেখা হবে।’’ যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ,‘‘ মোদীর দলই তো মহিলাদের সবচেয়ে বেশি অসম্মান করে।’’