Lok Sabha Election 2019

নেট ছাড়াই ই-মেল! ফের বিতর্কে মোদী

নরেন্দ্র মোদীর ‘ছোটবেলায়’ যে ভোর সাড়ে পাঁচটায় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজত না, আকাশবাণীর তরফ থেকেই সে কথা জানানো হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৯ ০২:২৯
Share:

ছবি: এপি।

ছোটবেলায় যেমন ভোর সাড়ে পাঁচটায় রেডিয়োয় ‘আগুনের পরশমণি’ শুনতেন, বড় হয়ে দেশে প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহারও হয়েছিল তাঁর হাত দিয়ে। তাতে রঙিন ছবি তুলে ই-মেলও করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নাই-বা তখনও ডিজিটাল ফটোগ্রাফি বা ই-মেল-এর চল শুরু হোক!

Advertisement

নরেন্দ্র মোদীর ‘ছোটবেলায়’ যে ভোর সাড়ে পাঁচটায় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজত না, আকাশবাণীর তরফ থেকেই সে কথা জানানো হয়েছে। আর খোদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, যে ৮৭-৮৮ সালে ডিজিটাল ক্যামেরায় রঙিন ছবি তুলে তিনি ই-মেল করেছিলেন, দেশে তখনও ইন্টারনেট ব্যবস্থাই চালু হয়নি। অন্তত বিরোধী নেতারা গবেষণা করে এই কথা বলছেন।

মেঘের কারণে পাকিস্তানি রেডারে বিমানের না-ধরা পড়ার কাহিনি শুনিয়ে সদ্য বিতর্ক ছড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সেই সাক্ষাৎকারের দু’দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিজেপির পক্ষে এই যুক্তি খণ্ডনের কোনও চেষ্টা হয়নি। তার মধ্যেই সেই একই সাক্ষাৎকারে আরও দুটি বিষয় খুঁজে বের করেছে বিরোধী দল কংগ্রেস, যা নিয়ে ফের তোলপাড় রাজনীতির দুনিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়া।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘‘দেশে সম্ভবত— সম্ভবত বলছি কারণ অন্য কারও কাছে থাকলে জানি না, আমিই প্রথম বার ডিজিটাল ক্যামেরা ব্যবহার করি। ৮৭-৮৮ সালে। সেই সময় খুব কম লোকের কাছে ই-মেল থাকত। সেই সময় ডিজিটাল ক্যামেরা বেশ বড় হতো। আমার কাছে একটা ছিল। আডবাণীজির (লালকৃষ্ণ আডবাণী) একটি সভার রঙিন ছবি তুলে দিল্লিতে পাঠিয়ে দিই। পরের দিন সেই রঙিন ছবি ছেপে যাওয়ায় আডবাণীজি চমকে গিয়েছিলেন। দিল্লিতে তাঁর রঙিন ছবি ছাপা হল কী করে?’’

কংগ্রেসের নেতা আহমেদ পটেল বললেন, ‘‘যত দূর স্মৃতি কাজ করছে, ভারতে ইন্টারনেট পরিষেবা শুরু হয়েছে ১৯৯৫ সালে। তা হলে ৮৭-৮৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী করে আর কাকেই বা ই-মেল পাঠাচ্ছিলেন? আর এই চৌকিদারই কাল পর্যন্ত রাজীব গাঁধীর নামে বলে এসেছেন— তথ্য-প্রযুক্তির জনক তিনি নন। অথচ আজ নিজেই কী করে দাবি করছেন, ইন্টারনেট চালুর সাত বছর আগে তিনি ই-মেল করতেন?’’

এ তো গেল পাল্টা তথ্য দিয়ে মোকাবিলার চেষ্টা। কিন্তু এর মধ্যে রাজনৈতিক আক্রমণের সুরটিও কৌশলে গুঁজে দিয়েছে কংগ্রেস। তাদের বক্তব্য, একে তো প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গরিব, চা বেচে বড় হয়েছেন। প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা পেলেন কোথা থেকে? দুই, মিথ্যে বলার সময়ও ‘আমি-আমি’ রোগ থেকে মুক্তি পেলেন না। নিজেই দাবি করে বসলেন, দেশে ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহারেও তিনি প্রথম। কংগ্রেসের নেতা পবন খেরা বললেন, ‘‘কী লজ্জা, কী লজ্জা! মনোরঞ্জনের দিক থেকে ঠিক আছে। কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী তো একটি পদ। তিনি এই সব কথা বললে তো আমাদেরও মাথা হেঁট হয়!’’

এমনিতেই সাক্ষাৎকারে মোদীর হাতে একটি পাতা দেখা যাচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রশ্নকর্তার আগাম প্রশ্ন লেখা তাঁর হাতে। আর তার কিছু ক্ষণ পরেই প্রশ্নকর্তার মুখ থেকে ঠিক সেই প্রশ্নটিই এল, ‘‘কবি নরেন্দ্র মোদীকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, গত পাঁচ বছরে কি কিছু লিখেছেন?’’ এই ‘সাজানো সাক্ষাৎকার’ নিয়েও হইচই হচ্ছে। সেই চ্যানেলেই আজ সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘আমার এই অনুষ্ঠান নিশ্চয়ই স্ক্রিপ্ট করা নয়?’’ প্রশ্নকর্তা জবাব দেন, ‘‘নিশ্চয়ই নয়।’’ রাহুল তখন বলেন, ‘‘মোদীর হাতে থাকা কাগজে কিন্তু আপনারা কী প্রশ্ন করবেন, তা লেখা ছিল।’’ প্রশ্নকর্তা বলার চেষ্টা করেন, মোদীর হাতের কাগজে শুধুই একটি কবিতা লেখা ছিল। কিন্তু রাহুল হেসে বোঝান, এই যুক্তি তিনি মানলেন না।

কংগ্রেস বলছে, এমন সাজানো চিত্রনাট্যেও প্রধানমন্ত্রী কী করে একের পর এক হাসির খোরাক জুগিয়ে দেশের মুখ পোড়াতে পারেন? কয়েক মাস আগে ত্রিপুরার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, মহাভারতে সঞ্জয় বসে ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের গল্প শোনাতেন কী করে? কারণ, প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট সব ছিল সেই সময়ে। প্রধানমন্ত্রীও কি সেই সব ব্যবহার করেছেন?

অন্য সময় হলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সামান্য কথা উঠলে রে-রে করে ওঠে বিজেপি। তবে এ বারে চুপ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement