নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
২০১৯-এ লোকসভা ভোটে ‘মোদী সুনামি’ উঠলে ২০২৪-এ আর কোনও নির্বাচন হবে না বলে জানিয়ে দিলেন বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ।
উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ের বিজেপি সাংসদ সাক্ষী মহারাজ বরাবরই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য সুপরিচিত। কিন্তু তাঁর এ বারের মন্তব্য শুনে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি লোকসভা ভোটে ফের জিতে এলে বিজেপি সংবিধান সংশোধনের কথা ভাবছে? কংগ্রেস, সিপিএম থেকে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের যুক্তি, বিজেপি নেতারা যে মনে মনে সংবিধান পাল্টে দিয়ে হিন্দু-রাষ্ট্র তৈরির স্বপ্ন দেখেন, সাক্ষীর এই মন্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট।
সাক্ষীর মন্তব্য, ‘‘এ বার মোদী সুনামিতে দেশ জেগে উঠেছে। আমি মনে করি, ২০২৪-এ আর কোনও ভোট হবে না। এটাই শেষ ভোট। আমরা দেশের নামে এই ভোট লড়ছি।’’ উন্নাওয়ের সাংসদের এই মন্তব্য শুনে উত্তরপ্রদেশে রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র জিশান হায়দর বলেন, ‘‘সাক্ষী মহারাজ আসলে বিজেপির মনোবাঞ্ছা স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’’ সিপিএমের পলিটব্যুরো নেতা নীলোৎপল বসুরও মত, ‘‘বিজেপি যে হিন্দু-রাষ্ট্র চায়, তা স্পষ্ট। কিন্তু মানুষ সেই ইচ্ছে পূরণ হতে দেবে না।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
সাক্ষী মহারাজের এই মন্তব্যে জেরে তাঁকে সামনে রেখেই বিজেপিকে নিশানা করেছে বিরোধী শিবির। কিন্তু একই সঙ্গে বিভিন্ন বিরোধী দল কংগ্রেসের দিকেও প্রশ্ন তুলেছে। অন্যান্য বিরোধী দলের প্রশ্ন, এ হেন বিপদের মুখে দাঁড়িয়েও কংগ্রেস নেতারা নানা রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী জোট নিয়ে এমন অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছেন কেন?
অখিলেশ সিংহ যাদব থেকে সীতারাম ইয়েচুরি— আগেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এই প্রশ্ন তুলেছেন। আজ একই প্রশ্ন তুলেছেন তেজস্বী যাদব। উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, বিহার থেকে মহারাষ্ট্র— আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে জোট করতে গিয়েও কংগ্রেসের শেষবেলায় জট পাকিয়ে ফেলার সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা।
বিহারে আসন নিয়ে আরজেডির সঙ্গে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কংগ্রেসের দর কষাকষি চলছে। লালুপ্রসাদ-পুত্র তেজস্বীর মন্তব্য, ‘‘গত পাঁচ বছরে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে কী হয়েছে, কারও কাছে লুকোনো নেই। সংবিধান ও দেশ অভূতপূর্ব সঙ্কটে।’’ এর পর সাক্ষীর মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে তেজস্বীর যুক্তি, ‘‘এ বার বিরোধীদের কোনও ভুল হলে, ভবিষ্যতে আর কোনও নির্বাচন হবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। নিজেদের কয়েকটি আসন বাড়ানোর জন্য, শরিকদের কয়েকটি আসন কমানোর জন্য যদি কেউ অহঙ্কার না-ছাড়েন, তা হলে সংবিধানে আস্থা রাখা মানুষ ক্ষমা করবে না।’’
গত কাল অখিলেশ যাদবও বলেছিলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে জোট রয়েছে। কংগ্রেসের উচিত তাকে সমর্থন করা। সময় চলে যাচ্ছে। জোট করা কঠিন। কিন্তু কংগ্রেস বড় দল। বিহারে আরজেডি, দিল্লিকে আম আদমি পার্টিকে কংগ্রেসের সাহায্য করা উচিত। বিজেপি বড় দল হয়েও ছোট আঞ্চলিক দলের সঙ্গে রফা করছে।’’
কংগ্রেস-এনসিপি মহারাষ্ট্রে দিন্দোরির আসন না ছাড়ায় বিরক্ত সিপিএমও। অথচ নাশিকের ওই এলাকা থেকে শুরু হওয়া কৃষকদের লং মার্চের ফায়দা কংগ্রেস-এনসিপি রাজ্যের সর্বত্র তুলতে চাইছে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির তাই বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসকে অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।’’