উজ্জয়িনীতে পেট্রোল পাম্পে তাণ্ডব কংগ্রেস সমর্থকদের। ছবি: টুইটার
বাম-কংগ্রেসের ডাকা ভারত বন্ধে ভাল সাড়া পড়েছে বিভিন্ন্ রাজ্যে। সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে অবরোধে সামিল হয়েছেন বন্ধ সমর্থনকারীরা। দিল্লিতে রাজঘাট থেকে মিছিল করে রামলীলা ময়দানে সভা করছেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা। বিহার, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশে ট্রেন ও জাতীয় সড়ক অবরোধের জেরে ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশেও প্রভাব পড়েছে বন্ধের। উজ্জয়িনীতে পেট্রোল পাম্পে ভাঙচুরের জেরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বন্ধ সমর্থনকারীদের। তবে বড় কোনও অশান্তির খবর মেলেনি।
নেতৃত্বে রাহুল গাঁধী
রাজধানী দিল্লিতে বন্ধের সমর্থনে মিছিল করল কংগ্রেস। রাজঘাট থেকে মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছেন দলের সভাপতি রাহুল গাঁধী। রামলীলা ময়দানে মিছিল শেষে একটি সমাবেশে যোগ দিয়েছেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলের নেতারা। রয়েছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, সোনিয়া গাঁধী, গুলাম নবী আজাদ, এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ার, জেডিইউ-এর শরদ যাদব ও অন্যান্য দলের নেত-নেত্রীরা। সমাবেশে মনমোহন বলেন, ‘‘মোদী সরকার সাধারণ মানুষের স্বার্থে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই সরকারের পরিবর্তন আসন্ন।’’
অগ্নিগর্ভ উজ্জয়িনী
বন্ধ সমর্থনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী। সেখানে একটি পেট্রোল পাম্পে ভাঙচুর চালায় কংগ্রেস সমর্থকরা। পুলিশ তাঁদের সরাতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। তাতে আহত হন এক কংগ্রেস সমর্থক। তবে পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়।
আরও পড়ুন: বাস ভাঙচুর অবরোধ, ধস্তাধস্তি, বন্ধে বিক্ষিপ্ত অশান্তি রাজ্য জুড়ে
গলা টিপছে জ্বালানি দৈত্য
চণ্ডীগড়ে অভিনব প্রতিবাদ আম আদমি পার্টির। রাজপথে মিছিল করে রাস্তায় বসে পড়েছেন আপ সমর্থকরা। তাঁদের মধ্যেই একজন সেজেছেন বাইকরূপী দৈত্য। সেই দৈত্য গলা টিপে ধরছে আম জনতার। অন্য একজন সেজেছেন ভিখারি। প্রতীকী প্রতিবাদে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, মোদী জমানায় ঊর্ধ্বমুখী জ্বালানীর দাম ও মূল্যবৃদ্ধিতে ভিখারির মতো পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের।
নেতা যখন আম জনতা
পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সামিল হতে ট্রেন সফর করলেন মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতারা। ছিলেন নিরুপম সঞ্জয়-সহ অন্যান্য নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার কর্মীরা বিক্ষোভ-মিছিল করেন। পুনেতে বাসে ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে এমএনএস কর্মীদের বিরুদ্ধে। যদিও দলের তরফে তা অস্বীকার করা হয়েছে। অন্ধেরি স্টেশনে রেল অবরোধ করেন কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা।
অবরুদ্ধ বিহার-ঝাড়খণ্ড
বন্ধে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে বিহারে। অধিকাংশ জাতীয় সড়ক কার্যত অবরুদ্ধ। সকাল থেকেই বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছেন আরজেডি, কংগ্রেস এবং জেডিইউ-এর একাংশ সমর্থকরা। এছাড়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে রেল অবরোধ করায় আটকে পড়েছে বহু লোকাল ও দূরপাল্লার ট্রেন। ট্রেন লাইনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে বিহারের জেহানাবাদে। পটনার রাজেন্দ্রনগরে রেললাইনে শুয়ে পড়েন জন অধিকার পার্টি লোকতান্ত্রিক দলের কর্মীরা।
অন্ধ্র-তেলঙ্গানায় প্রতিবাদ
অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বন্ধের। বিজয়ওয়াড়া ও বিশাখাপত্তনমে সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে মিছিল করছেন বাম সমর্থকরা। তেলঙ্গানার ইয়াদারি ভুবনগিরি জেলায় মিছিল করে রাস্তা অবরোধে সামিল হয়েছেন কংগ্রেস সমর্থকরা। হায়দরাবাদের মুসিরাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরনোর রাস্তায় বসে পড়েন বন্ধ সমর্থকরা।
মোদীর রাজ্যেও উত্তাপ
মোদীর রাজ্য গুজরাতেও সকাল থেকেই পথে নেমে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন কংগ্রেস সমর্থকরা। ভারুচে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও রাস্তায় নেমে বন্ধের সমর্থনে অবস্থান করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
ভুবনেশ্বরে রাস্তায় কাগজ পড়ছেন নেতারা
ওড়িশার ভুবনেশ্বরে বিশাল বাইক মিছিল করে কংগ্রেস। এছাড়া শহরের রাস্তায় বসে খবরের কাগজ পড়তে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস নেতাদের। ভূবনেশ্বর স্টেশনেও ট্রেন আটকে বিক্ষোভ দেখান বন্ধ সমর্থকরা। অন্যান্য প্রায় সব রাজ্যেই বন্ধে ভাল সাড়া পড়েছে।
কর্ণাটকে বন্ধ সর্বাত্মক
কর্ণাটকে কংগ্রেস তো বটেই, জোটে সামিল তাদের জোটসঙ্গী জেডিএস-ও। আগে থেকেই স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়া অটো এবং ওলা চালকদের সংগঠনও আগে থেকেই বন্ধ সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। রাস্তায় নামেনি কোনও সরকারি বাস। হুবলিতে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস সমর্থকরা।
পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিন এবং রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনই দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে কংগ্রেস এবং পাঁচটি বাম দল। সামিল হচ্ছে আরও অনেকগুলি বিরোধী দল। বামেদের হরতাল ১২ ঘণ্টার। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তবে কংগ্রেস বাংলায় ১২ ঘণ্টার বন্ধে যাচ্ছে না। অন্যান্য রাজ্যের কংগ্রেস সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধের ডাক দিলেও বাংলার কংগ্রেস সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত ৬ ঘণ্টার বন্ধ পালন করবে বলে প্রদেশ কংগ্রেস জানিয়েছে।
সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, এনসিপি, ডিএমকে, এমডিএমকে এই বন্ধে সামিল হচ্ছে। জেডি(ইউ)-এর যে অংশটি শরদ যাদবের সঙ্গে রয়েছে, তারাও সামিল হচ্ছে বন্ধে। তবে দেশ জুড়ে বিজেপি বিরোধী ঐক্যের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা যে দল, সেই তৃণমূল সামিল হচ্ছে না এই হরতালে।
(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)