ভোটের লাইনে সাধারণ মানুষ। ছবি: পিটিআই।
দিল্লি বিধানসভার দখল কার হাতে থাকবে? তা নির্ধারণ করতেই আজ, শনিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট শুরু হয়েছিল রাজধানীতে। দিনের শেষে সেখানে ৫৭.০৬ % ভোট পড়েছে। এ বারের নির্বাচনে লড়াইটা মূলত নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিজেপি বনাম অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)-র মধ্যে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বুথ-ফেরত সমীক্ষায় এখনও পর্যন্ত বিজেপির চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছে আপ।
৭০ আসনবিশিষ্ট দিল্লি বিধানসভার মোট ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ৩৮২ জন ভোটদাতা এ দিন প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। পরীক্ষায় কোন দল উত্তীর্ণ হল, কারা হল না তার উত্তর জানা যাবে ১১ ফেব্রুয়ারি।
রাশ কি ফের নিজের হাতে নিতে পারবেন কেজরী? নাকি মোদী-শাহের মেরুকরণের রাজনীতির জেরে হাওয়াবদল ঘটবে? তা নিয়ে যথেষ্ট সরগরম রাজধানীর রাজনীতি। যদিও নির্বাচনের আগে থেকেই ক্ষমতা ধরে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছে প্রায় সমস্ত সমীক্ষা। বিজেপির পাল্টা দাবি, ক্ষমতা দখল করবে তাদেরই দল।
দিল্লি ভোটের হাল হকিকত—
• দিনের শেষে ৫৭.০৬ % ভোট পড়েছে দিল্লিতে।
• বিকেল ৩টে পর্যন্ত ভোটের হার ৪৪.৭৮%।
• শাহিন বাগ থেকে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ফ্ল্যাগ মার্চ করল দিল্লি পুলিশ।
• দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোটের হার ৩২ শতাংশ।
• অরবিন্দ কেজরীবাল এ দিন দিল্লির মহিলাদের উদ্দেশে বলেন, ঘরের পুরুষদের সঙ্গে আলোচনা করুন কাকে ভোট দেওয়া উচিত।” তাঁর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। পাল্টা কেজরীকে তিনি বলেন, “আপনি কি মহিলাদের যোগ্য বলে মনে করেন না?” স্মৃতির মন্তব্যকে পাল্টা কটাক্ষ করে কেজরী বলেন, “দিল্লির মহিলারা ঠিক করে ফেলেছেন কাকে ভোট দেবেন তাঁরা।”
• ফের বিতর্কিত মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। শনিবার দিল্লিবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “দিল্লিকে ইসলামিক অঞ্চল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বিজেপিকে ভোট দিন।” তিনি আরও বলেন, “শাহিন বাগের আন্দোলনকারীরা অরবিন্দ কেজরীবালের সমর্থনে ভোটে নেমেছেন। দিল্লিবাসীর কাছে আমার আবেদন, শাহিন বাগকে রুখে দিতে, দিল্লিকে ইসলামিক অঞ্চল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে বেরিয়ে আসুন। বিজেপিকে ভোট দিন।”
• মঞ্জু কা টিলা এলাকায় আপ-কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে বচসা বাঁধে। সে সময় আপ-এর এক সমর্থককে চড় মারার চেষ্টার অভিযোগ উঠল চাঁদনি চক বিধানসভার কংগ্রেস প্রার্থী অলকা লাম্বার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, অলকার ছেলে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন ওই আপ কর্মী। পুলিশ ওই কর্মীকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ জানাবে দল।
• সকাল ১১টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে প্রায় ১৭ শতাংশ।
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ এ দিন বলেন, “দিল্লিবাসীদের কাছে আমার আবেদন, দিল্লিকে মিথ্যা এবং ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি থেকে মুক্ত করুন।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “স্বচ্ছ বাতাস, স্বচ্ছ পানীয় জল এবং প্রত্যক গরিবকে নিজের ঘরের ব্যবস্থা করে দিল্লিকে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রাজধানী বানাতে পারে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এবং প্রবল ইচ্ছশক্তিসম্পন্ন সরকার।”
• সকাল ৯টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৪.৯ %।
• এ বারের নির্বাচনে প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার নতুন ভোটার রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোট ফ্যাক্টরের অনেকটাই নির্ভর করছে এই নতুন ভোটারদের উপর।
দিল্লিতে ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু। সকালে থেকেই লম্বা লাইন রাজধানীর বিভিন্ন বুথে। ছবি: পিটিআই।
• ২ হাজার ৭০০টি পোলিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ১৩ হাজার পোলিং বুথ।
• শনিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে নতুন প্রজন্মকে ভোটদানের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আজ দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন। সব ভোটারের কাছে আমার আবেদন, আপনারা গণতন্ত্রের এই উত্সবে অধিক সংখ্যায় অংশগ্রহণ করুন। বিশেষ করে আমার নতুন প্রজন্মের বন্ধুরা।”
• আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরীবাল আবার দিল্লির মহিলা ভোটারদের ভোটদানের আহ্বান জানিয়ে টুইটে লিখেছেন, “আপনারা যেমন ঘরের সমস্ত দায়িত্ব সামলান, তেমনই দেশ ও দিল্লির দায়িত্বও রয়েছে আপনাদের কাঁধে। আপনারা নিজেরাও ভোট দিতে যান। সঙ্গে ঘরের পুরুষদেরও ভোট দিতে নিয়ে যান। ঘরের পুরুষদের সঙ্গে আলোচনা করুন কাকে ভোট দেওয়া উচিত।”
• শাহিন বাগ ও জামিয়া মিলিয়া— এই দুটো জায়গাকে আগেই নির্বাচন কমিশন ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই ভোট শুরুর আগে থেকেই এই দুই জায়গায় নিরাপত্তার বহর বাড়ানো হয়েছে। তবে এ দিন সকাল থেকেই শাহিন বাগের বুথগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শাহিন বাগে সকাল থেকেই ভোটের জন্য লম্বা লাইন। ছবি সৌজন্য টুইটার।
• সকাল সকাল ভোট দিয়েছেন বিজেপি নেতা রাম মাধব। ভোট দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
এই নির্বাচনে বিজেপি এবং আপ— দুই দলের মধ্যেই শাহিন বাগের আন্দোলন নিয়ে রীতিমতো তরজা চলেছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জি (এনপিআর)-র বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বর থেকে আন্দোলনে নেমেছেন শাহিন বাগ মহিলারা। সেই শাহিন বাগের আন্দোলনকে হাতিয়ার করে এ বারের দিল্লি বিধানসভার ভোট-যুদ্ধে নেমেছেন রাজনীতির কারবারিরা। এক দিকে যেমন বিজেপির বিরুদ্ধে এ নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে আপ। অন্য দিকে, রাজধানীর উন্নয়নের বদলে কেজরীর বিরুদ্ধে শাহিন বাগের আন্দোলনকারীদের সমর্থনের অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। তবে শেষমেশ কার পাল্লা ভারী হবে, তা ঠিক করবেন রাজধানীর ভোটাররাই!